• যোগ্য ব্যক্তিরা বাদ, তালিকায় নাম নেতার
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: পাকা বাড়ি থাকার পরেও কাশীপুর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত মণিহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়। অথচ গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগ্য আবাস প্রাপকদের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিজেপির তরফ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানানো হয়েছে। যদিও উপপ্রধানের তরফ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। কাশীপুর ব্লকের বিডিও সুপ্রিম দাস বলেন, বিষয়টি জানা নেই। আমরা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। 


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাস যোজনার তালিকায় প্রচুর কারচুপি রয়েছে, এমন অভিযোগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যের গরিব মানুষদের আবাসের টাকা বন্ধ রেখেছে। যার ফলে প্রচুর গরিব মানুষ অসুবিধায় পড়ছেন। তাই বর্তমান রাজ্য সরকার গরিব মানুষদের মাথার উপর ছাদ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন্দ্রের তৈরি তালিকা ধরে সার্ভের কাজ করা হয়েছে। বিরোধীদের তরফ থেকে যাতে কোনও রকম অভিযোগ না আসে, তাই সঠিকভাবে তালিকা তৈরির জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের দিয়ে সার্ভের কাজ করানো হয়েছে। সার্ভের কাজে জনপ্রতিনিধিদের পর্যন্ত রাখা হয়নি। প্রশাসনের আধিকারিকরা তাই বাংলার প্রকৃত গরিব মানুষদের আবাস দেওয়ার জন্য তালিকা তৈরি করেছে। তালিকা তৈরির পরেই পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কোথাও বিরোধীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে, কোথাও শাসকদলের নেতারা সার্ভের কাজ ঠিকমতো হয়নি বলে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও গ্রামের বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখিয়ে গ্রামসভা বাতিল করেছেন। বিক্ষোভ এড়াতে কিছু জায়গায় চুপিসারে গ্রাম সভা সেরে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


    মণিহারা পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত এলাকায় আবাসের তালিকায় প্রায় ৪০৩ জনের নাম ছিল। বর্তমানে ১৮৯ জন আবাস প্রাপক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। অভিযোগ, প্রচুর যোগ্য ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার তালিকায় উপপ্রধান সহ প্রচুর অযোগ্য এবং অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম তালিকায় রয়েছে।


    গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, উপপ্রধানেরা তিন ভাই রয়েছেন। তাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে। পাশাপাশি প্রচুর জমি রয়েছে। দুই ভাই বাইরে থাকেন। তাই সেই বাড়িতে বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ভাইয়েরা বাড়ির ভাগ নিলেও পাকা বাড়ির এক অংশের ভাগ পাবেন। পাশাপাশি শিয়ালডাঙা গ্রামে কয়েকজনের দ্বিতলা বাড়ি সহ পাকা বাড়ি রয়েছে। তাঁদের নাম আবাস যোজনায় রয়েছে। আর ত্রিপল খাটিয়ে, কাঁচা বাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের নাম বাদ পড়েছে।


    পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা মলয় মিশ্র বলেন, বর্তমানে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে প্রায় ৪০ জনের নাম দেখিয়ে দেব, যাঁদের অবস্থা ভালো। তাঁদের পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সার্ভের সময় কাঁচা বাড়ি দেখিয়ে তালিকায় নাম তুলেছেন। আমার গ্রামে চিন্তা বাউরি, মাধুরী বাউরিদের কাঁচা মাটির দেওয়াল, ত্রিপল খাটিয়ে বসবাস করছেন। দু’জনেই বিধবা মহিলা। তারপরেও আবাস তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ উপপ্রধান সহ কয়েকজন তৃণমূল নেতার পাকা বাড়ি থাকলেও আবাস তালিকায় নাম রাখা হয়েছে।


    যদিও উপপ্রধান সুনীল রজক বলেন, পাকা বাড়ির বিষয়ে অভিযোগটি মিথ্যা। আমি টালির উপর ত্রিপল দেওয়া বাড়িতে বসবাস করি।
  • Link to this news (বর্তমান)