সংবাদদাতা, কালিয়াচক: সর্বহারাদের দলের নেতা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধেই পিছিয়ে পড়া মানুষদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠল কালিয়াচকে। সেটাও আবার ভুল তথ্য দিয়ে। ঘটনার জল গড়িয়েছে জেলাশাসকের অফিস পর্যন্ত।
ঘটনাটি বৈষ্ণবনগর থানা এলাকার বেদরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের লালাপাড়া গ্রামের। অভিযোগের তির সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য তথা দাপুটে নেতা সন্দীপ লালার বিরুদ্ধে। জেলাশাসক এবং বিডিওকে ই-মেলের মাধ্যমে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। তাতে সই রয়েছে এলাকার একাংশ বাসিন্দারও।
অভিযোগ, কিছুদিন আগে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রাথমিক সার্ভের পর তালিকায় নাম ছিল লালাপাড়ার সন্দীপের। পঞ্চায়েত সদস্য ও বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সন্দীপের দোতলা বাড়ি রয়েছে। তা সত্ত্বেও চূড়ান্ত তালিকায় নিজের নাম তুলেছেন অন্য টালির বাড়ি দেখিয়ে।
অভিযোগকারী তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য চায়না দাস ও পিঙ্কি মণ্ডলদের বক্তব্য, আমরা চাই যোগ্যরা ঘর পাক। এভাবে দোতলা, তিনতলা বাড়ির মালিকের আবাসের তালিকায় নাম থাকা উচিত নয়। তাই আমরা অভিযোগ জানিয়েছি ডিএমকে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি কোনওভাবেই ঘর পাওয়ার যোগ্য নন। আমরা তাঁর নাম বাতিলের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।
চায়না ও পিঙ্কির দাবি, ব্লক অফিস থেকে সার্ভে করতে এসেছিলেন আধিকারিকরা। তখন সন্দীপ লালা তাঁর দোতলা বাড়ির কাছেই একটি দোকান ঘরকে নিজের বলে দেখিয়েছিলেন। এমনকী তদন্তকারীদের তিনি জানান, সেখানেই থাকেন। এরপরই চূড়ান্ত তালিকায় সন্দীপের নাম দেখা যায়। যদিও টালির ওই ঘরে থাকেন না সন্দীপ। সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বহুদিন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রজিত্ মণ্ডল বলেন, এলাকায় এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁদের পাকা ঘরের প্রয়োজন। তাঁদের নামও বাদ পড়েছে তালিকা থেকে। অথচ সন্দীপ লালার পাকা দোতলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাঁর নাম রয়েছে।
ইন্দ্রজিতের দাবি, এলাকায় সেরকম কারও সঙ্গে মেলামেশা করেন না সন্দীপ। তিনি ঘরের তদন্ত করতে আসা অফিসারদের ভুল তথ্য দিয়েছেন। আরেক বাসিন্দা মিনতি মণ্ডলের মন্তব্য, আমাদের পাকা বাড়ি নেই। টালি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে থাকি। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা। ঠান্ডার এবং বর্ষার সময় ভীষণ অসুবিধা হয়। কিন্তু সরকারের দেওয়া ঘরের তালিকায় কখনও নাম আসেনি। অথচ বড়লোকদের নাম রয়েছে। ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পঙ্কজ কুমার মণ্ডল বলেন, বিষয়টি শুনেছি। যোগ্যরা ঘর পান, সেটাই চাই। এদিন সন্দীপকে বারবার ফোন ও মেসেজ করা হলেও তিনি উত্তর দেননি। বিকেলে বাড়িতে গেলেও সন্দীপের দেখা পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, তাঁর মা ও স্ত্রী মেয়েকে রেখে কোথাও গিয়েছেন। ফলে পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।