সংবাদদাতা, দিনহাটা: রবিবারও পুনরাবৃত্তি হল গ্রাম সংসদ সভায় ভাঙচুরের ঘটনা। বাংলার বাড়ি ইস্যুতে শনিবার দিনহাটার ওকরাবাড়িতে গ্রামসভায় ব্যাপক গণ্ডগোল হয়েছিল। একই ইস্যুতে রবিবার দিনহাটা-১ ব্লকের পুঁটিমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামসভায় উত্তেজনা ছড়ায়। চেয়ার, টেবিল আছড়ে ভেঙে ফেলা হয়। যা ঘিরে রীতিমতো আতঙ্কে অনেকে পালিয়ে যান।
ঘরের তালিকায় নাম না থাকায় গ্রামসভা শুরুর পর কয়েকজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খোদ পঞ্চায়েত প্রধানের বুথেই মাত্র ৫টি ঘর অনুমোদন পেয়েছে। দাসপাড়া বুথে ঘরের সংখ্যা ১২টি। দুর্গাবাড়িতে ১০টির মতো ঘর আবাসের তালিকায় অনুমোদন হয়েছে। অবিলম্বে বাদ পড়া নাম অনুমোদিত তালিকায় তোলার দাবি করেন তাঁরা। গ্রামসভায় বিডিও অফিস থেকে আসা আধিকারিকদের ঘিরে রাখা হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করলে প্রধান, উপপ্রধান সহ প্রশাসনিক কর্তারা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের ভিতরে ঢুকে আশ্রয় নেন। তখন বাইরে থেকে গেট আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর সভায় বসার জন্য নিয়ে আসা চেয়ার যথেচ্ছভাবে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে উত্তেজিত জনতা। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত পৌঁছয় দিনহাটা থানার বিশাল পুলিস বাহিনী। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন পুলিস কর্মীরা। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের দরজা খুলে আধিকারিকদের বাইরে বের করে নিয়ে আসে পুলিস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুঁটিমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে মাত্র ৩৬৯টি ঘর অনুমোদন পাওয়া তালিকায় রয়েছে। ১২০০ মতো উপভোক্তা ঘর পাওয়ার অপেক্ষমান তালিকায় আছেন। ১২টি সংসদ বিশিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতে চারশোর কম ঘর অনুমোদন হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এদিন। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ নম্বর সংসদ থেকে জয়ী হয়েছেন সুরাইয়া বিবি। তিনি প্রধান। তাঁর বুথেই ৫টি ঘর অনুমোদন তালিকায় স্থান পেয়েছে। খোদ প্রধানের বুথেই সবচেয়ে কম ঘর অনুমোদন পেয়েছে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের পিছিয়েপড়া এলাকা দাসপাড়া, দুর্গাবাড়ি। সেখানেই ঘরের অনুমোদন সংখ্যা নামমাত্র। সেই কারণেই বঞ্চিত উপভোক্তদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। তাঁরাই গ্রামসভায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের নামও তালিকাভুক্ত করার দাবি তোলেন। প্রশাসনের কর্তারা তাতে রাজি না হওয়াতেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুঁটিমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুরাইয়া বিবির স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, অনেক গরিব মানুষেরই নাম অনুমোদিত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সাধারণ মানুষের তাতে ক্ষোভ হওয়াটাই স্বাভাবিক। গ্রামসভা চলাকালীন অনেকেই এসে উপস্থিত হন। তাঁদের নাম অনুমোদিত তালিকাভুক্ত করার দাবি করেন তাঁরা। তাতে রাজি না হওয়াতেই ভাঙচুর চালানো হয়। গরিব মানুষের নাম না থাকার বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শামসুল মিয়াঁ বলেন, প্রধানের বুথেই মাত্র পাঁচটি ঘর! গ্রাম পঞ্চায়েতের সবচেয়ে দুঃস্থ এলাকা দাসপাড়ায় ১২টি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। গোটা পঞ্চায়েতে মোট ৩৬৯টি ঘরের অনুমোদন এসেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘর না পাওয়াতেই এই বিক্ষোভ। দিনহাটা-১ ব্লকের পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট অফিসার অরিজিৎ সরকার বলেন, এদিন বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।