সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রাজ্যে সর্বাধিক মৃত্যু বজ্রপাতেই
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবথেকে বেশি। আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অন্য সব ধরনের দুর্যোগে মৃতদের মোট সংখ্যার থেকেও বেশি শুধুমাত্র বজ্রপাতে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা। ওই বছর রাজ্যে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ৫৭ জনের। বন্যা, ভারী বৃষ্টি, ঝড়, তাপপ্রবাহ ইত্যাদি সব মিলিয়ে মারা যান ৫০ জন। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশেই বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য দুর্যোগের তুলনায় বেশি।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগে ঘূর্ণিঝড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হতো। এখন উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে অনেক আগে থেকেই ঘূণিঝড়ের নির্দিষ্ট পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ওড়িশার সুপার সাইক্লোনে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোনও ঘূর্ণিঝড়েই মৃতের সংখ্যা তিন অঙ্কের সংখ্যা ছোঁয়নি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনাই তাঁদের লক্ষ্য।
কিন্তু বজ্রপাতের ক্ষেত্রে এরকম নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বজ্রপাত ঘটে। বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হওয়ায় বজ্রপাতের আশঙ্কার জেলাভিত্তিক পূর্বাভাস কিছুটা আগে দিয়ে থাকে আবহাওয়া দপ্তর। কিন্ত ঠিক কোথায় বাজ পড়বে, তা আগে থেকে জানানো সম্ভব নয়। আবহাওয়া দপ্তরের চালু করা ‘দামিনী’ মোবাইল অ্যাপে বজ্রপাতের এলাকাভিত্তিক পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ওই অ্যাপ ব্যবহার করার জন্য সাধারণ মানুষকে অনুরোধও করেছে আবহাওয়া দপ্তর। তবে বজ্রপাতে মৃত্যু বন্ধ করতে গেলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সব থেকে বেশি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা এইচ আর বিশ্বাস। কীরকম সচেতনতা বা সতর্কতা? যেমন, বাজ পড়ার সময় কখনও খোলা জায়গায় বা গাছের নীচে থাকা উচিত নয়। বজ্রপাতে মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটে গ্রামাঞ্চলে খোলা জায়গায়। সেই উন্মুক্ত জায়গায় জলের মধ্যে থাকলে মৃত্যুর আশঙ্কা আরও বেশি। প্রাক-বর্ষা সময়ে, মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। ভরা বর্ষার মরশুমে বজ্রপাতের শঙ্কা তুলনামূলক কম। তবে আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এমনকী অক্টোবরেও বজ্রপাতে মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে।
বজ্রপাতের পর রাজ্যে সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঝড়ে। ৪১টি মৃত্যু হয়েছে এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে। বর্ষার আগে বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চার হয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে এই মৃত্যুগুলি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৫ জনের। তাপপ্রবাহে ২০২৩ সালে রাজ্যে মারা গিয়েছেন ৫ জন।