• কাঁথি কো-অপারেটিভে জয়ী তৃণমূল, অধিকারী গড়েই খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বিজেপি  
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, কাঁথি: কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভোটে অধিকারী গড়েই ভরাডুবি হল বিজেপির। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে পাঁচ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আধাসেনা থাকলেও সুবিধা করতে পারল না গেরুয়া শিবির। পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সমবায় ব্যাঙ্কে বহু বছর অধিকারী-শাসন কায়েম ছিল। কিন্তু, রবিবার সেই ব্যাঙ্কের নির্বাচনেই খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বিজেপি। প্রতিনিধি নির্বাচনে মোট ১০৮টি আসনের মধ্যে ১০৪টিতেই জয়ী হল তৃণমূল। কাঁথি থেকে এগরা, হলদিয়া থেকে নন্দীগ্রাম, সবুজ আবির উড়িয়ে জয়োল্লাসে মাতলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর ও মেদিনীপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার ভোটাররা এদিন বেলদায় ভোট দিয়েছিলেন। সেখানেও ১০-০মার্জিনে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। 


    কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে মোট ১৪টি নির্বাচনী কেন্দ্র। তার ছ’টিই রয়েছে কাঁথিতে। ওই ছ’টি কেন্দ্রে মোট ২৮জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিজেপির মাত্র চারজন জয়ী হয়েছেন। বাকি সকলেই তৃণমূল কংগ্রেসের। এই চারটি আসন ছাড়া আর কোথাও দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। এমনকী, এক সপ্তাহ আগে তমলুক কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার ব্যাঙ্কের ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে বিজেপি ১৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল। সেখানেও দু’টি আসনেই জয়ী হল তৃণমূল। হেঁড়িয়া শিবপ্রসাদ ইনস্টিটিউশনে নন্দীগ্রাম, খেজুরি, ভগবানপুর এবং চণ্ডীপুর এলাকার মোট ১৪টি আসনে ভোট ছিল। ভোট ঘিরে ছিল টানটান উত্তেজনা। খেজুরি, নন্দীগ্রাম এবং ভগবানপুর তিনটি বিধানসভা বিজেপির দখলে। গণনা শুরু হতেই সেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। একের পর এক আসনের ফল দেখে বিজেপি শিবির হতাশ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্পে সবুজ আবির, ব্যান্ড-তাসা সহযোগে কর্মীরা উল্লাসে মাতেন। 


    শুধু হেঁড়িয়া নয়, রামনগরে ১১, এগরায় ১১, মঙ্গলামাড়ো কেন্দ্রে ন’টি, মহিষাদলে ১১, নন্দকুমারে ন’টি, কোলাঘাটে ছ’টির মধ্যে সবকটিতেই তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এবছর লোকসভা ভোটে এই জেলায় তৃণমূল কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায়নি। এদিন কো-অপারেটিভে জিতে সেই কষ্ট কিছুটা লাঘব করলেন তৃণমূল কর্মীরা। 


    এই জয় ঘাসফুল শিবিরের কাছে অবশ্য সহজ ছিল না। একাধিক জায়গায় গোঁজ প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। অনেকের অনুমান, তাতে দলের দুই শিবিরের নেতৃত্বের মদত ছিল। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দলের বিধায়কদের নিয়ে মিটিংয়ে একযোগে লড়াই করার নির্দেশ দেন। ১১ডিসেম্বর কোলাঘাটে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। অফিসিয়াল প্রার্থীতালিকাও ঘোষণা করা হয়। তারপরই নেতৃত্বের মধ্যে ঐক্যের ছবি ধরা পড়ে। তাতে বিজেপিকে মোকাবিলা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। রাজীববাবু বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ডেকে এনেও বিজেপি নেতা কাঁথিতে নিজের গড় ধরে রাখতে পারলেন না! আগামী দিনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা ভোটের ফল কী হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত এখনই মিলে গেল। তৃণমূল নেতা আশিস চক্রবর্তী বলেন, গ্রামের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই আস্থা রাখলেন।  


    কাঁথি-৩ নম্বর কেন্দ্রে চারটি আসনে তৃণমূলের চার কাউন্সিলার সহ ছ’জন লড়াই করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে দলের অনুমোদন না থাকা দুই কাউন্সিলার রীনা দাস ও শেখ সাবুল পরাজিত হয়েছেন। কাঁথি-১ নির্বাচনী কেন্দ্রে তৃণমূলের দুই গোঁজ প্রার্থী শ্যামাশিস মিশ্র এবং কৃষ্ণেন্দু মাইতি জয়ী হয়েছেন। একইভাবে কাঁথি-২ কেন্দ্রে দলের অনুমোদন না থাকা কল্লোল ঘোষ জয়ী হয়েছেন। কাঁথি-৩ ও ৬নম্বর কেন্দ্রে বিজেপির চারজন জয়ী হয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)