নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: হুগলির শ্রীরামপুরে বাণিজ্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য উদযাপনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। এই হেরিটেজ উৎসবকে কেন্দ্র করে সব মহলে এখন চূড়ান্ত তৎপরতা। বড়দিন এবং নতুন ইংরেজি বছরকে সামনে রেখে ওই উৎসবকে ঘিরে সাজতে শুরু করেছে শহর শ্রীরামপুর। আলোকমালায় সেজে উঠেছে সেন্ট ওলাভ চার্চ, গঙ্গাকে ঘিরে থাকা রাজপথ। সাজানো হচ্ছে সাবেক দিনেমার গভর্নর হাউস, ডেনিস ট্যাভার্ন, শ্রীরামপুর কলেজ সহ শহরের নানা স্থাপত্যকে। আগামী ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে হেরিটেজ উৎসব। ২ জানুয়ারি হবে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।
ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে তুলে ধরার উৎসব হলেও বস্তুত কলকাতার পার্ক স্ট্রিটকে নতুন বছরের প্রাক্কালে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীরামপুর পুরসভা। তাই ঐতিহ্যের এই উৎসবে থাকবে খাবারের স্টল থেকে ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর। পাশাপাশি, লখনউ থেকে আনা হচ্ছে কাওয়ালি দল। আমজনতার জন্য খুলে দেওয়া হবে দিনেমার গভর্নর হাউসের মিউজিয়ামও। গোটা পরিকল্পনার পিছনে আছে শ্রীরামপুর পুরসভা। উৎসব কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা সন্তোষ সিং (পাপ্পু) বলেন, ডেনিস ট্যাভার্নকে কেন্দ্র করেই বঙ্গভূমে রেস্তরাঁ ব্যবসার সূত্রপাত। শ্রীরামপুরেই ছাপার অক্ষরে প্রথম বাংলা হরফের জন্ম, বাংলা নবজাগরণের সূচনা। দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় শ্রীরামপুরেই। আবার আমাদের শহরেই আছে ইউনেস্কো স্বীকৃত একমাত্র গির্জা সেন্ট ওলাভ গির্জা। এই সমস্তকে একত্রিত করেই শ্রীরামপুরকে শো-কেস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বড়দিন এবং নতুন বছরকে সামনে রেখে পর্যটকদের জন্য শ্রীরামপুরকে একটি গন্তব্য হিসেবেও আমরা তুলে ধরতে চাইছি। সেই পরিকল্পনার নামই শ্রীরামপুর হেরিটেজ উৎসব। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি চরমে উঠেছে। সন্তোষ সিং বলেন, বাংলা তথা শ্রীরামপুরের পরম্পরাকে সামনে রেখে আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। সেখানে সুফি সঙ্গীত থেকে ঠুংরি, খেয়াল, টপ্পার আসরও বসবে।
শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান গিরিধারী সাহা বলেন, ধর্মীয় আবেগ থেকে সাংস্কৃতিক চেতনা, রসনা তৃপ্তি থেকে ঐতিহ্যের অনুসন্ধান, সমস্ত আবেগকে আমরা এক জায়গায় বাঁধছি। সমস্ত অনুভূতির এক বর্ণময় কোলাজ করে শ্রীরামপুর হেরিটেজ উৎসবকে মানুষের সামনে আনার তোড়জোড় চলছে। প্রথমবারের হেরিটেজ উৎসবকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমরা ডেনমার্ক সরকার সহ বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ফলে বিদেশিদের উৎসবে আসার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রথমবারের হেরিটেজ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল শ্রীরামপুর পুরসভা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে জুড়েছে শ্রীরামপুর কলেজ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সহ নাগরিকদের একটি বড় অংশ। শহরের সেন্ট ওলাভ চার্চ এবং গঙ্গা সংলগ্ন এলাকাকে ইতিমধ্যেই পার্ক স্ট্রিটের আদল দেওয়ার প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছে। ঐতিহ্যের উৎসবকে ঘিরে সাজছে শহর। জমজমাট হয়ে উঠছে শীতের মরশুম। উৎসব নগরীর চেহারা নিচ্ছে শ্রীরামপুর।