• ডানা ছাঁটা হল কাউন্সিলারদের,  বিল্ডিং প্ল্যান পাশে অফিসারদের কমিটি
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শহরাঞ্চল তো বটেই, মফস্‌সলেও ব্যাঙের ছাতার মতো মাথা তুলছে বহুতল আবাসন। নানা ধরনের নির্মাণকাজ চলছে। সব ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে তো? সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তার কয়েক মাসের মধ্যে পুরসভা এলাকায় বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের নিয়মে বড়সড় বদল আনল রাজ্য সরকার। নয়া নিয়মে কাউন্সিলারদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। দায়িত্ব ও ক্ষমতা বাড়ছে পুরসভার অফিসারদের। আইন সংশোধনের পর রাজ্য সরকার যে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, এখন থেকে আর ‘বোর্ড অব কাউন্সিলার্স’  নয়, নির্মাণের অনুমতি দেবে বিশেষ কমিটি। মূলত পুরসভার অফিসার ও পদাধিকারীদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে কাউন্সিলারদের সরাসরি কোনও ভূমিকা থাকবে না। 


    কেন এই নিয়ম পরিবর্তন করা হল? পুর-আধিকারিকরা বলছেন, বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার উপর বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। নয়া নিয়মের ফলে প্ল্যান অনুমোদনে কাউন্সিলারদের প্রভাব খাটানো বন্ধ হবে। সরকারি আধিকারিকরা বিবেচনা করে প্ল্যান অনুমোদন বা বাতিল করবেন।


    সরকারি বিজ্ঞপ্তি থেকে স্পষ্ট, কমিটিতে পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারের গুরুত্ব ও ক্ষমতা বাড়ছে। পদাধিকার বলে তিনিই এই কমিটির আহ্বায়ক। পুরসভার চেয়ারম্যানই হবেন কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও থাকবেন ফিনান্স অফিসার ও ইঞ্জিনিয়াররা। এছাড়া ‘বোর্ড অব কাউন্সিলার্স’ মনোনীত কোনও একজন কাউন্সিলার থাকবেন এই কমিটিতে। এতদিন ‘বোর্ড অব কাউন্সিলার্স’ বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিত। সেখানে আধিকারিকদের মতামত দেওয়ার খুব একটা পরিসর ছিল না। 


    নয়া বিধিকে স্বাগত জানিয়েছেন পুরসভার জনপ্রতিনিধিরা। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পুর-চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক সময় বোর্ড অব কাউন্সিলার্সের বৈঠক ডাকতে গিয়েই জটিলতার মুখে পড়তে হয়। এখন আর কাউন্সিলারদের জন্য বসে থাকতে হবে না। কাজ এগবে দ্রুত। মানুষের সুবিধা হবে।’ জেলায় জেলায় পুরসভাগুলিতে নতুন নিয়ম সংক্রান্ত নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে। তার ভিত্তিতে রাজপুর সোনারপুর, বারুইপুরের মতো বেশ কিছু পুরসভায় কমিটি গঠন করে বৈঠকও হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। তবে বহু পুরসভা এখনও তা করে উঠতে পারেনি। কিছু পুরসভা এখনও বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল নয়। 


    প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পঞ্চায়েত এলাকায় বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করানোর ক্ষেত্রেও কড়া পদক্ষেপ করেছে নবান্ন। বাড়ি-ফ্ল্যাটের প্ল্যান অনুমোদনে পঞ্চয়েতগুলির ক্ষমতা ছেঁটে পুরোটাই নবান্নের স্ক্যানারে নিয়ে আসা হয়েছে। পুরসভা এলাকাতেও যাতে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনও বেআইনি কারবার না হয়, তা নিশ্চিত করতে কাউন্সিলারদের এভাবে ডানা ছেঁটে আধিকারিকদের উপর ভরসা রাখা হল। এর ফলে সাধারণ মানুষ বাস্তবে কতটা সুবিধা পায় এবং অবৈধ নির্মাণে কতটা রাশ টানা যায়, সেটাই এখন দেখার। 
  • Link to this news (বর্তমান)