•  ২ থেকে ৫ লাখে সব ভারতীয় পরিচয়পত্র!  বারাসতে ভুয়ো নথির কারখানা, ধৃত যাদবপুরের ছাত্র সহ ৩​​​​​​
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একটা মাত্র ঠিকানা। সেখানে গেলেই মিলবে সব ভারতীয় পরিচয়পত্র। তবে, প্রত্যেকটি ভুয়ো। আর সেই নথি কাজে লাগিয়ে তৈরি হবে পাসপোর্ট। বারাসতের কাজীপাড়ায় রীতিমতো রমরমা ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল সমরেশ বিশ্বাস ও তার ছেলে রিপন। এই বাপ-ব্যাটার হাতযশে হাসিনা সরকারের পতনের পর বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকে পড়েছে শত শত বাংলাদেশি। তারা এই ঠিকানা থেকে নথি জোগাড় করেই রীতিমতো ভারতীয় সেজে ঘুরছে দেশেরই আনাচে কানাচে! পুলিস সূত্রে খবর, গত দু’মাসেই প্রায় ২৫০ পাসপোর্ট তৈরি করেছে তারা। আর তার সবই সরাসরি ভুয়ো কিংবা জাল পরিচয়পত্র কাজে লাগিয়ে বানানো। এতে তাদের সঙ্গত করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তথা গড়িয়া পোস্ট অফিসের অস্থায়ী কর্মী দীপক মণ্ডল। ইতিমধ্যেই এই তিন অভিযুক্তকে  গ্রেপ্তার করেছেন কলকাতা পুলিসের সিকিওরিটি কন্ট্রোল অফিসের (এসসিও) অফিসাররা। উদ্ধার হয়েছে জাল নথিও।


    গত সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ এসেছিল, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পাসপোর্টের  জন্য যত নথি জমা পড়েছে, সেই সব যাচাই করতে হবে। সেই মতো আধার ও ভোটার কার্ড পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নথি পাঠায় রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস। দপ্তর জানায়, আধারের নম্বর ঠিক থাকলেও নাম ও ছবির মিল নেই। ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। তখনই ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের বিষয়টি সামনে আসে। এমন ২৫০ ভুয়ো পাসপোর্ট এ পর্যন্ত ট্র্যাক করতে পেরেছে পুলিস। তবে সংখ্যাটা অনেকটাই বাড়বে বলে আশঙ্কা। সবচেয়ে বড় কথা, এই সবই ইস্যু হয়েছে ৯ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের (আরপিও) অনুসন্ধানে উঠে আসে, এরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশি। তারা এসসিও’কে বিষয়টি জানায়। তারপরই ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ হয়। তদন্তে গঠিত হয় সিটও।


    খোঁজ শুরু হয় পাসপোর্ট প্রাপকদের মোবাইল নম্বরের। আরপিও থেকে সিট অফিসাররা জোগাড় করেন সেই নম্বর। কল ডিটেলস ঘেঁটে নাম পাওয়া যায় সমরেশ, রিপন ও দীপক সহ একাধিক এজেন্টের। তাদের আটক করার পরই খোলে রহস্যের জাল। আধিকারিকরা জানতে পারেন, অনুপ্রবেশকারীদের জাল পাসপোর্ট এবং অন্যান্য ভারতীয় পরিচয়পত্র তারাই তৈরি করে দেয়। দর? ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা! ভুয়ো পাসপোর্ট সমরেশ বা বাংলাদেশিদের হাতে দিয়ে আসে গড়িয়া ডাকঘরের অস্থায়ী কর্মী দীপক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার পাশাপাশি সে এই কাজ করে। এরপরই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।


    বাবা-ছেলে জেরায় জানিয়েছে, তাদের বাড়িতে জাল আধার, ভোটার, প্যান, এমনকী স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্রও তৈরি হয়। তাদের কারখানার প্রধান খদ্দের বাংলাদেশিরা। পাসপোর্ট আবেদনের সময় জমা পড়ত সেই নথি। তারা নিজেরাও ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করত। কিন্তু অন্য পদ্ধতিটি অনেক বেশি ‘কার্যকর’। এর জন্য স্থানীয় থানার পুলিসকর্মী, এমনকী পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের একাংশকেও ম্যানেজ করে রেখেছিল তারা। ফলে নথি সরেজমিনে যাচাই হতো না। পাসপোর্ট কর্মীদের মাধ্যমে ঠিকানাও বদলে যেত। সব ঠিকানা দেওয়া  হতো গড়িয়া ডাকঘরের। সেখানে পাসপোর্ট আসার পর তুলে নিত দীপক।
  • Link to this news (বর্তমান)