প্রতিযোগিতায় মেতে শীতের তাপমাত্রা, সাড়ে ১২ ডিগ্রিতে নামল শহরের পারদ
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চিড়িয়াখানা থেকে ভিক্টোরিয়া কিংবা গড়ের মাঠ অথবা ইকো পার্ক। মরশুমের শীতলতম দিনের মজা লুটেপুটে নিতে রাস্তা লোকে লোকারণ্য। রবিবার কমলালেবুর কোয়া ছাড়াতে ছাড়াতে, চিপসের প্যাকেট হাতে, আইসক্রিম হাতে চুটিয়ে ছুটি উপভোগ করল মানুষ। আর চলতে ফিরতে সবার মুখে প্রার্থনা, ‘শীত যেন আরও কয়েকদিন থাকে। এ মজার দিন যেন চটজলদি শেষ না হয়।’
শীতের শুরু কলকাতাকে মোটেও নিরাশ করেনি। শনিবার ছিল ১৪ ডিগ্রি। তারপর আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানাল, রবিবার শহরের ন্যূনতম তাপমাত্রা ১২.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। যা এখনও পর্যন্ত এ মরসুমের শীতলতম। চিড়িয়াখানার বাইরে এক ব্যক্তির সরস মন্তব্য, ‘তাই নাকি? আজকে শীতলতম? এ তো দেখছি শীত, শীতের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।’ ‘শীতলতম’ শব্দটি ছড়িয়ে পড়তেই ওই ব্যক্তির পাশ থেকে এক মা তাঁর খুদে সন্তানের জ্যাকেটের বোতাম বন্ধ করে বললেন, ‘আজকে খুব ঠান্ডা।’ কেউ যেন আনমনেই বলে উঠলেন, ‘সেই জন্যই আজকে এতো ঠান্ডা লাগছে সকাল থেকে। এখন বুঝলাম।’ এক দম্পতি ভিক্টোরিয়ায় এসেছিলেন বড় একটি ব্যাগ নিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে দূরে কোথাও যাচ্ছেন। মহিলার বক্তব্য, ‘দূরে নয়, ফিরতে রাত হবে। তখন দু’তিনটে সোয়েটার গায়ে না দিলে সমস্যা। তাই অনেকগুলো বইতে হচ্ছে।’ এখন দুপুরের রোদে গড়ের মাঠে বসলেও গরম অনুভূত হচ্ছে না। ঠান্ডা হাওয়ায় দাপটে তাপ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ফলে সবাই বসছে। বাদামের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে গড়ের মাঠে।
শহর কিংবা শহরতলি, কেউ পরিবার, কেউ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, ছুটি উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। মেদিনীপুর থেকে এসেছিলেন সৌরদীপ্ত মাইতি। বললেন, ‘সকাল ছ’টার ট্রেনে বেরিয়েছি। আমাদের ওখানে আরও ঠান্ডা।’ বারাসতের সঙ্গীতা রায় বললেন, ‘দেখতে দেখতে বছর শেষ হয়ে গেল। হাতে আর মাত্র দু’টো রবিবার। এখন কলকাতা ঘুরে নিচ্ছি। সামনের রবিবার পিকনিক।’ শীতের হাত ধরে পাল্টে গিয়েছে শহরের চিত্র। পার্ক স্ট্রিটজুড়ে আলো বসছে। কেকের দোকানে জমছে ভিড়।
শীতের দৌড়ে কলকাতা শুধু নয়, শহরের আশপাশের এলাকাও কাঁপছে। হাওয়া অফিসের হিসেব অনুযায়ী, দমদম ১৩, উলুবেড়িয়া ৯.৩, ডায়মন্ডহারবার ১১.৮, সল্টলেক ১৪.৪, ক্যানিং ১১, মগরা ১০.৫ ও বারাকপুরে তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এ তো গেল আবহাওয়ার হিসেব। এদিন হিসেবের বাইরে চলে গিয়েছিল মধ্যবিত্তের বাজেট। নিউটাউনের ইকোপার্কে ভিড় জমজমাট। বেরাতে এসে আইসক্রিম হবে না? খুদেদের বায়নাতে বাবা-মা নাস্তানাবুদ। কাশি হবে, গলায় ব্যথা হবে, এসব থোড়াই কেয়ার। ফলে আইসক্রিম, মোমো, চাউমিন. বিরিয়ানি, কফি সব হল। পার্ক স্ট্রিটে বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফে খুঁজতে খুঁজতে পর্ণা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘ঠান্ডা যেন আরও অনেকদিন থাকে। তারপর আবার তো সেই প্যাচপ্যাচে গরম।’ নিজস্ব চিত্র