জাল নথিপত্রে পাসপোর্ট বানিয়ে ৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছিল সমরেশ
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: জাল নথি দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরিই পেশা ছিল তার। মোটা টাকার বিনিময়ে সেইসব পাসপোর্ট বিক্রি করে বারাসত শহরের নামী আবাসনে বাড়ি কিনেছিল সমরেশ বিশ্বাস। ছেলেকে কাজে লাগিয়েছিল শাগরেদ হিসেবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হওয়ার পর এই আবাসনে অচেনা মানুষের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে। তবে এর ভিতরে যে এত বড় রহস্য লুকিয়ে ছিল, ঠাহর করতে পারেননি আবাসিকরা। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও সমরেশ ও ছেলে রিপন গ্রেপ্তার হতেই অবাক হয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনা সামনে আসায় উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। তাঁদের প্রশ্ন, তাহলে কি অনুপ্রবেশকারীরা এই ‘ভুয়ো’ পাসপোর্ট দেখিয়ে এদেশে এসে থাকছে? প্রসঙ্গত, এর আগেও একই অভিযোগে তিন-তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিল সমরেশ।
বারাসত শহরের চাঁপাডালি মোড় থেকে যশোর রোড ধরে খানিকটা এগলেই রাস্তার ধারে রয়েছে একটি নামী বহুতল আবাসন। এই আবাসনেই বছর চারেক আগে একটি বাড়ি কেনে ব্যবসায়ী সমরেশ বিশ্বাস। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী ও এক ছেলে। বর্তমানে ছেলে মধ্যমগ্রামের একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সর্বদাই হাসিখুশি থাকত বিশ্বাস পরিবার। আবাসিকরা কমবেশি তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলেই চিনতেন। তবে রবিবার ভুল ভাঙল বাসিন্দাদের। এলাকার মানুষ দেখেন, সাতসকালে কলকাতা পুলিসের একটি টিম এসে হানা দিল বি ব্লকের ৩০৩ ফ্ল্যাটে। ওই ফ্ল্যাট থেকেই সমরেশ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। পাশাপাশি তার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ছেলে রিপনকেও গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমরেশের বাইরে ব্যবসা আছে বলেই পরিবারের সদস্যরা বলত। পাসপোর্ট, ভিসার ব্যবসা করত বলে জাহির করত পরিবার। কিন্তু, কোথায় অফিস, তা কোনওদিন খোলসা করেনি পরিবার। বারে বারে জানতে চাওয়া হলেও নিয়ে মুখ খোলেনি তারা। জিজ্ঞাসা করলে রেগে যেত তারা। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, বাড়িতে বসেই যে জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির ব্যবসা ফেঁদেছিল সমরেশ। সমরেশের নামে একই অভিযোগ হয়েছে দিল্লি, বারাসত ও চুঁচুড়া থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সে আগে তিনবার গ্রেপ্তার হয়। সম্প্রতি, বাংলাদেশে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে ওপার থেকে অনেকেই এপার বাংলায় আসতে শুরু করেছেন। অভিযোগ, এই সময় মোটা টাকায় ‘ভুয়ো’ পাসপোর্টের কারবার জমে উঠেছিল সমরেশের। গোপন সূত্রে এই খবর পায় পুলিস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত। সমরেশ বিশ্বাস কীভাবে এতদিন ধরে দেশবিরোধী কাজ করছিল? তাছাড়া একাধিকবার গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও সে কেন নিজেকে অন্য পেশায় সরিয়ে নিয়ে গেল না? মাঝেমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে বড় বড় গাড়িতে করে লোকজন আসত। বাংলাদেশিদেরও আনাগোনা ছিল। সাম্প্রতিককালে যাতায়াত বেড়েছিল তাঁদের। -নিজস্ব চিত্র