শুধু লোহার পাত নয়, দেহ টুকরো করার জন্য একাধিক ধারালো অস্ত্র!
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টালিগঞ্জ কাণ্ডে ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র। শ্যালিকা খাতিজা বিবির মাথায় হাতুড়ির আঘাতে খুন করে ধৃত আতিউর লস্কর। এরপরেই দেহ তিন টুকরো করা হয়। মানুষের দেহ কাটা হল কীভাবে? কোন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়? ধৃতের একাধিক বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে এখন এই প্রসঙ্গেই ধন্দে পুলিস। অভিযুক্তের দাবি, তাঁর পুট্টি করার লোহার পাত দিয়েই কাটা হয়েছে দেহ। কিন্তু, তা মানতে নারাজ তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান, খাতিজার দেহ কাটতে আরও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে অভিযুক্ত। তার হদিশ পেতে ঘটনার পুনর্নিমাণ করতে চান তদন্তাকারীরা।
শুক্রবার সকালে টালিগঞ্জের গ্রাহাম রোড থেকে উদ্ধার হয় মহিলার কাটা মুণ্ড। তদন্তে নেমে অভিযুক্ত রঙের মিস্ত্রি আতিউরকে ডায়মন্ডহারবার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। শনিবার রাতেই রিজেন্ট কলোনির ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ধৃতের দাবি, সেখানেই একটি নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটের ভিতরে শ্যালিকাকে ডেকে পাঠিয়েছিল সে। প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া নিয়ে দু’পক্ষের বচসা বাধে। সেখানেই হাতুড়ি দিয়ে সজোরে খাতিজার মাথায় আঘাত করে সে। তাতেই মৃত্যু হয়। এরপরেই মুণ্ডু, ধড় ও পা— এই তিনভাগে কেটে ফেলা হয় দেহ। আতিউর তার শ্যালিকার মুণ্ডটি গ্রাহাম রোডের ময়লার স্তূপে ফেলে দেয়। বাকি দেহাংশ লোপাট করা হয় ঘটনাস্থলেরই পিছনের একটি ফাঁকা জমিতে।
পুলিস সূত্রে খবর, ওই নির্মীয়মাণ বাড়িতেই রঙের কাজ করছিল আতিউর। সেখানেই শনিবার রাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অকুস্থল থেকে মিলেছে। রঙের কাজে ব্যবহৃত লোহার পাত ও হাতুড়ি। কলকাতা পুলিসের দুঁদে গোয়েন্দাদের দাবি, মানবদেহ কাটতে ওইটুকু লোহার পাতের ধার যথেষ্ট নয়। জোরে চাপ দিলে কিছু পরিমাণ মাংস কাটা গেলেও হাড় কাটা একেবারেই সম্ভব নয়। বেশি চাপ দিলে রঙের কাজে ব্যবহৃত ওই লোহার পাতটি ভেঙে যেতে পারে। তা না হলেও সেটি বেঁকে যাবে। তা দিয়ে পুনরায় দেহ কাটা সম্ভব হবে না।
তদন্তকারীদের দাবি, দেহ কাটতে ব্যবহার করা অস্ত্র প্রসঙ্গে ধৃতের বয়ান বিশ্বাসযোগ্য নয়। তথ্য গোপন করছে অভিযুক্ত। পুলিসের মতে, ধারালো কোনও করাত জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া দেহাংশে আঘাতের চিহ্ন থেকেও সেবিষয়ে কার্যত নিশ্চিত তদন্তকারীরা। কিন্তু, ঘটনাস্থল থেকে সেই অস্ত্র মেলেনি। তাহলে সেই অস্ত্র কি অন্য কোথাও লোপাট করেছে অভিযুক্ত? রবিবার আলিপুর আদালতে পেশ করা হয় অভিযুক্তকে। সরকারি আইনজীবী
ধৃতের ১৪ দিনের পুলিস হেফাজতের আর্জি জানান। সেখানেই সরকারি কৌঁসুলির দাবি, ‘অভিযুক্ত আরও কিছু অস্ত্র ব্যবহার থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে হবে’। বিচারক অভিযুক্তের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। নিজস্ব চিত্র