টিমটিম করে টিকে থাকা অস্তিত্ব নিয়েও ট্যাক্সিচালকেরা কী ভাবে যাত্রী প্রত্যাখ্যানের দুঃসাহস দেখান, তা প্রায়ই যাত্রীদের কাছে বোধগম্য হয় না। চালকদের বড় অংশের অবশ্য বক্তব্য, বহু বছর ভাড়া না বাড়ায় মিটার অনুযায়ী ভাড়া নিলে খরচ কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। পাশাপাশি, দূরে কোথাও যাত্রী নিয়ে গেলে ফিরতি পথে খালি আসার আশঙ্কা তাড়া করে তাঁদের। ফলে, অল্প দূরত্বে শহরের মূল ব্যবসায়িক এলাকার মধ্যেই যাত্রী নিয়ে চলাচলে বেশি স্বচ্ছন্দ তাঁরা।
রাজ্য সরকারের তরফে সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেই অ্যাপ ট্যাক্সিচালকদের মধ্যে সে ভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি বলেই অভিযোগ। কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, রেল স্টেশন এবং বিমানবন্দরের মতো কিছু জায়গা ছাড়া অন্যত্র যাত্রী তুলতে খালি গাড়ি নিয়ে ছুটতে হচ্ছে। তাঁদের দাবি, সাধারণ অ্যাপ-ক্যাবের তুলনায় পুরনো অ্যাম্বাসাডর গাড়িতে ডিজ়েলের খরচ অনেক বেশি। তাই খালি গাড়ি নিয়ে সামান্য পথ ছোটারও বিলাসিতা তাঁরা দেখাতে পারেন না। সরকারি অ্যাপে ট্যাক্সি ভাড়া করার পরে যাত্রা বাতিল করলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর কোনও জরিমানা হয় না বলে অভিযোগ। এর ফলে যাত্রী তোলার জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যের কাছে পৌঁছনোর পরে ‘ট্রিপ’ বাতিল হয়ে গেলে তাঁদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ চালকদের।
সেই সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির চালকদের বড় একটি অংশ মানছেন যে, তাঁরা মূল শহরের অলিগলির রাস্তা চিনলেও অ্যাপ-ক্যাব চালকদের মতো গুগল মানচিত্রের নির্দেশ বুঝে গন্তব্যে পৌঁছনোর দক্ষতা সে ভাবে অর্জন করতে পারেননি। তাই ‘লোকেশন’ বুঝে বাড়ির দরজায় পৌঁছে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে তাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন। ৫৮ বছরের ট্যাক্সিচালক রামনরেশ পাসোয়ান বলছেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মের যাত্রীদের সাদা ক্যাবই বেশি পছন্দের। অ্যাম্বাসাডরের মতো বড় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে স্মার্টফোনের নির্দেশ দেখার পাশাপাশি যাত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে গন্তব্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে আমাদের প্রজন্ম যথেষ্ট পিছিয়ে।’’তাঁর বয়সি চালকদের অনেকেই এই কারণে অ্যাপ-ক্যাব চালাতে ভয় পান বলে মানছেন তিনি। যে কারণে সরকারি অ্যাপে শামিল হওয়ার পরেও বহু চালক তা সব সময়ে ব্যবহার করেন না বলে অভিযোগ। সরকারি অ্যাপের ব্যবহারে চালকদের অভ্যস্ত করে তুলতে সচেতনতা শিবির ছাড়াও ভাড়ার পুনর্বিন্যাস জরুরি বলে জানাচ্ছেন ওই চালক।
১৫ বছরের পুরনো গাড়ি সংক্রান্ত নিয়মের গেরোয় শহর থেকে হলুদ ট্যাক্সি উধাও হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে অনেকের গলাতেই মন খারাপের সুর। চালকদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, এ শহরে শেষ বার হলুদ ট্যাক্সির ভাড়া বেড়েছিল ২০১৮ সালে। সে সময়ে ট্যাক্সির মিটার পরিবর্তনের কাজ করিয়েছিলেন ১৭ হাজার চালক। তার বছর চারেক পরে ২০২২ সালে এককালীন দেড় হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র নিতে আবেদন করেন হাজার দশেকেরও কম ট্যাক্সিচালক। বর্তমানে যাবতীয় নথি ঠিকঠাক রয়েছে, এমন ট্যাক্সির সংখ্যা এসে ঠেকেছে তিন হাজারেরও কমে। ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কেনা হয়েছে, এমন নথিভুক্ত ট্যাক্সির একটি বড় অংশ আগেই বাতিল হওয়ার প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছে। সেই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। (চলবে)