• শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়ার জন্মস্থান ও মন্দির অবহেলিত, ক্ষোভ
    বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, মায়াপুর: নবদ্বীপ শহরের পশ্চিম প্রান্তে একমাত্র ‘বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট’ রেলস্টেশন ছাড়া গোটা শহর জুড়ে চৈতন্যজায়া বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি সেভাবে চোখেই পড়ে না। পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০২০ সালে ঐতিহ্যশালী সম্পদ রূপে ঘোষণা করলেও নবদ্বীপের মালঞ্চপাড়ায় অবস্থিত শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর জন্মস্থান আজও অবহেলিত থেকে গেছে। এমনকী আর্থিক অভাবে মন্দিরের সংস্কারের কাজও থমকে রয়েছে।


    গৌরবিষ্ণুপ্রিয়া সেবা সমিতির কোষাধ্যক্ষ রাজু ঘোষ জানান, চৈতন্য মহাপ্রভুর স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর আদি জন্মভিটে মন্দির এটা। ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই মন্দির। তাই গুরুত্ব ও প্রাচীনত্বের নিরিখে অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে এর কোনও তুলনাই চলে না। কিন্তু হেরিটেজ ঘোষণার পরও মন্দির পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সরাসরি কোনও আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়নি। শুধু হেরিটেজের তকমাটাই বসে গেছে। স্থানীয় ভক্তদের নামমাত্র দানে এবং কমিটির সদস্যদের প্রচেষ্টায় মন্দিরটি কোনওরকমে চলছে। মন্দির পরিচালন কমিটির সেক্রেটারি শ্যামল দেবনাথ, প্রেসিডেন্ট ডাঃ বিমল হোড় এবং নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান মাননীয় বিমানকৃষ্ণ সাহা মহাশয়ের সহায়তায় মন্দির পরিচালিত হচ্ছে।


    তাঁর আক্ষেপ, নবদ্বীপের সব মন্দিরে চূড়া থাকলেও অর্থের অভাবে এখনও নবদ্বীপের সবচেয়ে আদি এই মন্দিরে চূড়া নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এমনকী বৃষ্টি হলে মন্দিরের ছাদের কিছু জায়গা থেকে এখনও জল পড়ে। সেটাও আমরা অর্থের অভাবে সংস্কার করতে পারছি না। আমরা ভীষণভাবে সরকারি সাহায্য চাইছি। আমরা চাই মন্দিরটা নতুন করে সেজে উঠুক। এবিষয়ে আমাদের রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র সরকার কেউ যদি আর্থিক সাহায্য করেন, তাহলে আমরা খুব উপকৃত হই।


    মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত তথা শ্রীচৈতন্য-পার্ষদ অদ্বৈতপ্রভুর পঞ্চদশ বংশধর নরোত্তম গোস্বামী জানান, কমিটি পরিচালিত মন্দির হলেও সেবার কাজ আমাদের বংশের লোকেরাই করেন। তবে, বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর ভাই যাদব মিশ্রর বংশধরেরা এখনও আছেন নবদ্বীপের মহাপ্রভু পাড়ায় ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরে। গৌরবিষ্ণুপ্রিয়ার শ্রীবিগ্রহটি আগে মাটির তৈরি ছিল। পরবর্তীতে ভয়াবহ বন্যায় মৃন্ময় বিগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন ২০০৩ সালে নিম কাঠের তৈরি বর্তমান শ্রীবিগ্রহটি গর্ভগৃহে স্থাপিত হয়। বর্তমানে মন্দিরটি ২ বিঘা জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রতি বছর এখানে তিনটি উৎসব খুব জাঁকজমক করে পালিত হয়— সরস্বতী পুজোর সময় শ্রীপঞ্চমীতে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর আবির্ভাব তিথি, দোল পূর্ণিমায় মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি এবং বৈশাখ মাসে বুদ্ধপূর্ণিমায় গৌর-বিষ্ণুপ্রিয়ার বিবাহ তিথি।


    পেশায় শিক্ষক রাজুবাবু আরও জানান, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কিছু সাহায্য পেলেও কেন্দ্র থেকে কখনও কোনও সাহায্যই পাইনি আমরা। মন্দিরের অনেক জমি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেদখল হয়ে গেছে। তার কিছুটা পুনরুদ্ধার করা গেছে পুরসভার চেয়ারম্যান মাননীয় বিমানকৃষ্ণ সাহা ও কমিটির সেক্রেটারি শ্যামল দেবনাথের সহায়তায়। মন্দির সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় ভক্তবৃন্দের জন্য যাত্রীনিবাস সহ আরও উন্নয়নের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। তিনি যদি এই বিষয়ে কোনওরকম সাহায্য করেন, তাহলে আমরা তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)