সংবাদদাতা, বোলপুর: গোরুর গাড়ি করে ফিরছেন নবদম্পতি— সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি দেখার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, এটা নিশ্চয়ই ৬০ বা ৭০ দশকের স্মৃতিচারণ। কিন্তু না, এই ছবি একেবারেই টাটকা। সোমবার তোলা। গ্রামের ছেলে মঙ্গল ভাণ্ডারীর বিয়ে হয়েছে গত রবিবার। বিয়ে করতে যাওয়ার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন গোরুর গাড়িকে। তাঁর এই ভাবনা যে হিট, তা তিনি বাড়ি ফিরতেই বুঝে গিয়েছেন। গোরুর গাড়িতে আসীন নবদম্পতিকে দেখতে গোটা গ্রামের লোক হাজির। স্বামীর এই চিন্তাভাবনায় প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে দিব্যি পা দুলিয়ে গোরুর গাড়ি চড়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছেন নববধূ রাখি দাস। মঙ্গলের এই অভিনব ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই পরিবার সহ সকলেই।
বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের আলবাধা-সর্পলেহনা পঞ্চায়েতে এই অভিনব ঘটনাটি ঘটেছে। শান্তিনিকেতন থানার অন্তর্গত এই পঞ্চায়েতের গোবিন্দবালা গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল ভাণ্ডারী। তিনি পেশায় কৃষক। পাশাপাশি তাঁর একটি সেলুনও রয়েছে। স্নাতকস্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজে। দেখাশোনা করে বিয়ে করেছেন রতনপুরের রাখি দাসকে। রাখিও বিদ্যাসাগর কলেজ থেকেই বাংলায় স্নাতক। রবিবার সন্ধ্যায় বর সেজে গোরুর গাড়ি চড়েই হাজির হয়েছিলেন মঙ্গল। তা দেখে বিয়েবাড়ির সকলেই অবাক। তবে অনেকে ভেবেছিলেন, গোরুর গাড়ি চেপে এলেও ফেরার সময়ে নববধূকে নিশ্চয়ই আধুনিক গাড়িতে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। গোরুর গাড়িতে চাপিয়েই নববধূ নিয়ে ফেরেন মঙ্গল। রতনপুর থেকে গোবিন্দবালার দূরত্ব মাত্র দু’ কিলোমিটার। গোরুর গলায় ঝুলতে থাকা ঘণ্টার টুং টাং আওয়াজ শুনতে শুনতে কখন যে পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারিনি, বলে জানিয়েছেন মঙ্গল।
মঙ্গল বলেন, আমি গ্রামের ছেলে। আমার বাবা-মাও বিয়ে করে এইভাবেই ফিরেছিলেন। গ্রামের পুরনো রীতি ও ঐতিহ্যগুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই গোরুর গাড়ি বেছেছি। নতুন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নববধূ রাখি বলেন, গ্রামের মেয়ে হলেও কখনওই গোরুর গাড়ি চড়িনি। স্বামীর সঙ্গে গোরুর গাড়ি চড়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে শুনে প্রথমে একটু চমকে গেছিলাম। কিন্তু মেঠো রাস্তায় গোরুর গাড়ি চাপার অভিজ্ঞতা বেশ ভালোই। রাস্তার খানাখন্দে একটু কোমরে ব্যথা ও ধকল হয়েছে ঠিকই। তবে স্বামীর ভাবনা বলে কথা, ওটা ‘ম্যানেজ’ করে নিয়েছি।