দামোদরের ভাঙনে তলিয়ে যেতে বসেছে মদনপুরের প্রাচীন কালীমন্দির ও শ্মশান
বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: অণ্ডাল থানার মদনপুর এলাকার সুপ্রাচীন কালীমন্দির সহ মহাশ্মশান নদীভাঙনের কবলে পড়ে দামোদরের গর্ভে চলে যেতে বসেছে। শ্মশানের একাংশের জায়গা ইতিমধ্যেই ধসে তলিয়ে গিয়েছে। ভগ্নদশায় থাকা শ্মশানঘাটটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। তাঁদের দাবি, কালীমন্দির সহ শ্মশানঘাট সংরক্ষণের জন্য দ্রুত নদের পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু করতে হবে। পঞ্চায়েত প্রধান পার্থ দেওয়াশী বলেন, ওই পবিত্র স্থানটির সঙ্গে মদনপুর সহ বহু এলাকার মানুষের আবেগ, ভালোবাসা ও স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কয়েকশো বছর ধরে তাঁদের প্রিয়জনদের মৃতদেহ দাহ হয়েছে। তাঁদের দাবি মতো মন্দির সহ শ্মশানঘাট সংরক্ষণের জন্য আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) কাছে পাড় বাঁধানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। শ্মশান যাত্রীদের জন্য একটি বিশ্রামাগার নির্মাণের আবেদন করা হয়েছে। পাড় বাঁধানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সেচদপ্তরের কাছ থেকে বহু কষ্টে ছাড়পত্র মিলেছে। সেই মতো গতবছর এডিডিএ’র পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাপজোকের কাজও শুরু হয়। প্রায় ৭০০ ফুট বোল্ডার দিয়ে বাঁধানোর কথা হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারণে হঠাৎই এডিডিএ’র পদক্ষেপ থমকে যায়। ফের এডিডিএ’কে অনুরোধ করব পাড় বাঁধানোর জন্য। মন্দির ও শ্মশানঘাট কোনও কারণে নদের গর্ভে তলিয়ে গেলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হবেন। দ্রুত কাজও সম্পূর্ণ করতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মদনপুর, বক্তানগর, পূবরা, পলাশবন ও কাঁকড়ডাঙা সহ বহু গ্রামের বাসিন্দারা এই শ্মশান ব্যবহার করেন। কালীমন্দিরে পুজো দেন। ওই শ্মশান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে দামোদর নদ ছিল। ওই দেড় কিলোমিটার বিস্তৃর্ণ এলাকা কৃষিজমি ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদের গতিপথের পরিবর্তন হতে থাকে। ওই সমস্ত কৃষিজমি নদগর্ভে তলিয়ে যায়। বর্তমানে প্রাকৃতিক নিয়মে নদের পথ সম্পূর্ণ বদলে শ্মশানঘাটের ভাঙন শুরু হয়েছে।
শ্মশানঘাটের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ভাগ্যধর রায় বলেন, নদের বাম অংশের ভাঙন শুরু হয়েছে। তার কবলে রয়েছে এই শ্মশানঘাট। কালীমন্দির ও শ্মশানঘাটটিতে প্রচুর বড়বড় গাছ থাকায় শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে রেখেছে। শ্মশানের দু’টি দিকে ভাঙনে প্রায় ২৫-৩০ ফুট গর্ত হয়ে নদের গর্ভে চলে গিয়েছে। দ্রুত পাড় বাঁধানোর কাজ না শুরু হলে যে কোনও মুহূর্তে মন্দির ও শ্মশানঘাট সম্পূর্ণ নদী গর্ভে চলে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীকান্ত ঢাঙা ও সোমনাথ দাস বলেন, প্রায় ৩ বছর ধরে শ্মশানঘাট ধীরে ধীরে নদের গর্ভে যাচ্ছে। গ্রামবাসীরা সকলে মিলে সংরক্ষণের জন্য পঞ্চায়েতে জানিয়েছিলাম। তারপরেই গতবছর এডিডিএ কাজ শুরু করার জন্য এসেছিল। তারপরে আর কোনও খবর নেই। এই শ্মশানঘাট সংরক্ষণ করতে হলে দ্রুত পাড় বাঁধাতে হবে প্রশাসনকে। এডিডিএ’র চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন, বিষয়টি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। কী পরিস্থিতির মধ্যে আছে তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-নিজস্ব চিত্র