নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: নাড়া পোড়ানো কমতেই বাঁকুড়ায় দূষণের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে পরিযায়ী পাখিরা জঙ্গলমহলের এই জেলায় আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাঁকুড়ায় জাঁকিয়ে শীতও পড়েছে। ফলে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে বাঁকুড়ার খালবিল, জলাশয়ে উড়ে এসে বসছে। উল্লেখ্য, দূষণ সহ অন্যান্য কারণে ভরা ঠান্ডার মরশুমেও জেলায় পরিযায়ী পাখির দেখা মিলছিল না। ফলে জেলাবাসী বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে ছিল। বাঁকুড়ায় পরিযায়ী পাখির আনাগোনা শুরু হওয়ায় সকলেই স্বস্তি পেয়েছে।
বাঁকুড়া উত্তরের বিভাগীয় বনাধিকারিক দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ প্রধান বলেন, বড়জোড়া ব্যারেজ সহ আমাদের ডিভিশনের বহু জায়গায় প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি যাতায়াত করে। এবার শীতের শুরুতে পাখি না আসার ফলে কিছুটা চিন্তা হচ্ছিল। তবে গত কয়েকদিনে প্রচুর বিদেশি পাখি জলাশয়গুলিতে এসেছে। ফলে আমরা চিন্তামুক্ত হয়েছি।
বাঁকুড়ার উপ কৃষি অধিকর্তা দেবকুমার সরকার বলেন, নাড়া পোড়ানোর ফলে জেলায় দূষণের মাত্রা বেড়েছিল। টানা সচেতনতামূলক প্রচারের ফলে ওই প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। বর্তমানে চাষিরা রবিশষ্য চাষ করছেন। ফলে চারিদিকে সবুজের সমারোহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারফলে পরিযায়ী পাখিরা ফের জেলামুখী হয়েছে। পরিবেশের পক্ষে এটা একটা ভালো ইঙ্গিত বলেই আমরা মনে করছি।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন পুয়াবাগান এলাকার একটি জলাশয়ে প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি আসে। একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে ওই জলাশয় রয়েছে। জলাশয়টি কচুরি পানায় ভরে থাকে। তারমাঝেই পরিযায়ী পাখিরা এসে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। বাচ্চা মানুষ করে ফের শীতের শেষে বিদেশে ফিরে যায়। মাঝে একবার কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই পানা সাফ করে দিয়েছিল। ওইবছর পাখির দল পুকুরের উপরে চক্কর কাটলেও জলে নামেনি। সেবার তারা ফিরে গিয়েছিল। পরের বছর থেকে আর কলেজ কর্তৃপক্ষ পুকুর পরিষ্কারের ঝুঁকি নেয়নি। সোমবার সেখানে গিয়ে প্রচুর পরিযায়ী পাখি চোখে পড়ল। ফলে পরিযায়ী পাখিরা যে এদেশে অস্থায়ী বাসস্থান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কতটা সজাগ তা ওই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার। তেমনই নাড়া পোড়ানোর ফলে বাঁকুড়ায় এবার মাত্রাছাড়া দূষণ হয় বলে খোদ কৃষিদপ্তর জানিয়েছে। একেই কারখানার দূষণে জেলার বহু জলাশয়ের বাস্ততন্ত্র কার্যত ধ্বংসের মুখে পড়েছে। তারউপর পোড়া খড়ের ছাই, ধোঁয়ার আস্তরণ জলাশয়কে পাখিদের নরক করে তোলে। ওইসব দূষিত জলাশয়ে পরিযায়ী দূরের কথা, দেশি বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙারও দেখা মিলছিল না। আগামী বছরেও যাতে একই সমস্যা না হয়, তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃষি ও বনদপ্তরের আধিকারিকরা আবেদন করছেন।