• ধোকরা শিল্প বাঁচাতে উদ্যোগের অভাব, আক্ষেপ শিল্পীদের
    বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, গঙ্গারামপুর: হরিরামপুরের ঐতিহ্যবাহী ধোকরা শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। বন্ধ গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালিত কেন্দ্র। জেলার মধ্যে একটা সময় হরিরামপুর ব্লকের বৈরাঠা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ধোকরা শিল্প কলার প্রসিদ্ধ ছিল। এলাকার রাজবংশী সমাজের মানুষ বিশেষ করে বাড়ির মহিলারা বংশপরম্পরায় দক্ষ কারিগরি শিক্ষায়, পাট দিয়ে ব্যাগ, বাড়িতে ব্যবহারের জন্য পাটের তৈরি কার্পেট বানাতেন। চাদরও তৈরি করতেন সুতো ও পাট দিয়ে। পাটের তৈরি ধোকরায় থাকত নানা রঙের ডিজাইন। বাম আমলে বৈরাঠা এলাকায় সমবায়ের মাধ্যমে ধোকরা তৈরির মেশিন থেকে শুরু করে শতাধিক মহিলা সমবায়ের মাধ্যমে আয়ের পথ খুঁজে পেলেও, পরবর্তীতে সমবায় বন্ধ হয়ে পড়ে। সমবায়ের সরকারি ঘর থেকে মেশিনপত্র জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকে। ২০২১ সালে রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের উদ্যোগে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সমবায়ের ঘর নিজেদের হেফাজতে নিয়ে শিল্পীদের জন্য কারখানা খুলে দেয়। কিন্তু কিছুদিন চলার পর আবার ধোকরা কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পীরা ব্লক প্রশাসনের উদাসীনতাকেই এজন্য দায়ী করেছেন।


    উন্নত প্রশিক্ষণের অভাবে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন মহিলারা। যদিও বৈরাঠা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২০০’র বেশি ধোকরা শিল্পী রয়েছেন। শিল্পীদের হাতে তৈরি ধোকরা এখনও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যান মহিলারা। 


    দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় পাট উত্পাদন ভালোই হয়। অভিযোগ, পাটজাত শিল্পকে উৎসাহিত করতে পারছে না সরকার। রাজবংশী সমাজের ট্র্যাডিশনাল ধোকরা শিল্পের আদৌও কী উন্নয়ন সম্ভব? সেই প্রশ্ন তুলছেন রাজবংশী মহিলারা। বৈরাঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান আনসার আলি বলেন, আমাদের হরিরামপুর ব্লকের মধ্যে শুধুমাত্র বৈরাঠা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ধোকরা শিল্পের প্রসারের জন্য শিল্পীদের কাজ করার কারখানা রয়েছে। আমি পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নেওয়ার পর কারখানার চাবি পাইনি। কারখানা বর্তমানে বন্ধ হয়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ সভায় ধোকরা শিল্পীদের জন্য আগামীতে কাজ করব, সেই প্রস্তাব হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা শিল্পদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করব। জেলা শিল্পদপ্তরের জেনারেল ম্যানেজার স্বপন প্রামাণিক বলেন, ধোকরা মূলত কুশমণ্ডি ও হরিরামপুর ব্লকেই হয়ে থাকে। ব্লকের মাধ্যমে যদি আমরা কোনও প্রস্তাব পাই তবে, শিল্পীদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি কেনার টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারব। প্রস্তাব এলে রাজ্যে পাঠানো হবে। 


    বৈরাঠার শিল্পী যূথিকা সরকার বলেন, কারখানা বন্ধ। কোনও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই আমরা বাড়িতেই পাটের ধোকরা, কার্পেট, ব্যাগ তৈরি করে উত্তর দিনাজপুরের পতিরাজ ও ধনকৈল হাটে বিক্রি করতে নিয়ে যাই। ব্লক ও জেলা প্রশাসন কোনওদিন আমাদের খোঁজও নিতে আসে না।  হরিরামপুরে বন্ধ ধোকরা শিল্প সামগ্রী তৈরির কেন্দ্র।-নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)