নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দুই শিশু সহ একই পরিবারের চারজনের। গোটা একটি পরিবার শেষ হয়ে গেল। মৃতেরা সকলেই কোচবিহার-২ ব্লকের বাণেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালজানির কাউয়ারডারার বাসিন্দা। রবিবার রাতে আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁরা তুফানগঞ্জের নিউটাউনে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তুফানগঞ্জ-নাটাবাড়ি হেরিটেজ রোডের কুড়ারপাড় এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পুকুরে পড়ে যায়। এতেই মৃত্যু হয় চারজনের।
পুলিস জানিয়েছে, মৃতরা হলেন সঞ্জিত রায় (৪০), বিপাশা রায় সরকার (৩৫), ইশাশ্রী রায় (৫) ও ইভান রায় (২)। সঞ্জিতবাবু নাটাবাড়ি বসপাড়া পুঁটিমারি উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। স্ত্রী বিপাশাদেবী নাটাবাড়ির দাড়িকামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। বিপাশাদেবীর পিসতুতো বোনের বিয়ের নিমন্ত্রণে যোগ দিতেই তাঁরা দুই সন্তান নিয়ে সন্ধ্যায় নিজেদের গাড়ি নিয়ে তুফানগঞ্জে যান। ফেরার পথেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরের ১৪-১৫ ফুট গভীরে গিয়ে পড়ে। টের পেয়ে আশেপাশের লোকজন অন্ধকারেই উদ্ধার কাজে নামেন। গাড়িটি দড়ির সাহায্যে টেনে পাড়ে তোলেন। গাড়ির ভিতর থেকে চারজনকে বের করা হয়। এদিকে, খবর পেয়ে পুন্ডিবাড়ি থানার পুলিস পৌঁছয়। চারজনকেই হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।
সোমবার সকাল হতেই মর্মান্তিক খবর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা বাণেশ্বরে। দূরদূরান্ত থেকে তাঁদের আত্মীয়, বন্ধু, শোকার্ত প্রতিবেশীরা সঞ্জিতবাবুর বাড়ির সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। মা সুনীতিবালা রায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাস দু’য়েক আগেই সঞ্জিতবাবুর পিতৃবিয়োগ হয়েছে। তারপর একইসঙ্গে পুত্র, পুত্রবধূ, নাতি ও নাতনিকে হারিয়ে সুনীতিদেবী মাটিতে গড়াগড়ি করে বিলাপ করতে থাকেন। সঞ্জিতবাবুর দাদা রঞ্জিতকুমার রায় একই সঙ্গে থাকেন। খবর পেয়ে চলে আসেন সঞ্জিতবাবুর শাশুড়ি প্রণতি সরকার।
সোমবার শোকস্তব্ধ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে কাউয়ারডারায় আসেন কোচবিহারের পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যাচ্ছে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। আমরা অন্যান্য দিকও খতিয়ে দেখছি। সঞ্জিতবাবুর সহকর্মী শিক্ষক সঞ্জয় অধিকারী বলেন, রাত পৌনে ১২টা নাগাদ দুর্ঘটনার খবর পাই। উনি ভালোই গাড়ি চালাতেন। কোথা থেকে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারছি না। দুই সন্তানের সঙ্গে সঞ্জিত ও বিপাশা রায়। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সকলেই। ছবি পরিজনদের সৌজন্যে প্রাপ্ত।