• চিন্ময়ের জামিন: ফের সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাবেন রবীন্দ্র
    বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: বাংলাদেশে জেলে আটক সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের চিন্ময় কৃষ্ণদাস। যখন কোনও আইনজীবী চিন্ময় কৃষ্ণদাসের পক্ষে দাঁড়াতে রাজি হননি, ঠিক সে সময় ৭৪ বছরের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর হয়ে। তার জন্য শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হতে হয় তাঁকে। কিন্তু পিছপা হননি রবীন্দ্রবাবু। অদম্য মনোবলের বাংলাদেশের এই প্রবীণ আইনজীবী এখন এপারে। চিকিৎসার জন্য বারাকপুরের আনন্দপুরীতে এসেছেন ছেলের বাড়িতে। তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে। 


    প্রবীণ ওই আইনজীবী বললেন, চিন্ময় কৃষ্ণদাস শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।  আইনজীবী হিসেবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। কিছু আইনজীবী আমাকে হেনস্তা করেছেন। আমার সঙ্গে পুলিস ছিল কিন্তু ওরা কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছিল না। আমাকে বলেছিল মেরেই ফেলবে। বলছিল, যে আইনজীবী চিন্ময় কৃষ্ণদাসের পক্ষে দাঁড়াবে, তাঁকে কোতল করা হবে। ওরা বলছিল, ভারতীয় দালাল, হুশিয়ার। র’এর এজেন্ট, ওকে মেরে ফেল। রবীন্দ্রবাবুর আক্ষেপ, ওটা আমারও দেশ! এই দেশকে আমরা স্বাধীন করেছিলাম! এখন পাকিস্তানি মৌলবাদীরা এর পেছনে রয়েছে। কর্তব্যের খাতিরে নিগৃহীতের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। চিন্ময় প্রভুকে বেআইনিভাবে জেলে রাখা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে লড়া উচিত। আগামী ২ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে যাব। আমার বয়স এখন প্রায় ৭৫। একদিন মরতে হবে, তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব। ওঁনাকে সহজে মুক্তি দেবে না। হাইকোর্টে যেতে হবে, সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে হবে।


    তিনি বলেন, চিন্ময় প্রভুর সঙ্গে জেলে দেখা করতে গিয়েছিলাম, দেখা হয়েছে। এই মুহূর্তে জেলের মধ্যে ওঁনাকে মেরে ফেলার আশঙ্কা করছি না। ওঁর বিরুদ্ধে যে ধারা দেওয়া হয়েছে, তা একদম মিথ্যা, জামিন অযোগ্য। ফাঁসানোর জন্যই এটা করেছে। হিন্দুদের অধিকারের লড়াই লড়তে গিয়ে বাংলাদেশে ওঁর সুনাম হয়ে যাচ্ছে, লক্ষ লক্ষ লোক তাঁর কথা শুনতে জড়ো হচ্ছে। উনি সাধারণ মানুষের দাবি পেশ করেছিলেন, এখন তাঁকেই বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী। এখন বলা হচ্ছে মাথায় টিকি, কপালে তিলক আর সিঁদুর লাগানো থাকলেই ইসলামের শত্রু হিসিবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ পর্বে ৭১’এ এগুলো ভাবতেই পারিনি। প্রগতিশীল লোকেরাই এখন  প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে গিয়েছে।


    রবীন্দ্রবাবুর বক্তব্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের মতোই এবারও আশা করেছিলাম, আগস্টের গণঅভ্যূত্থান পর্বে ভেবেছিলাম, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মিলেমিশে থাকব। এখন বাংলাদেশে মনে হয়, দুই-তিনটি সরকার হয়ে গিয়েছে! কেউ কারও কথা মানছে না। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। এভাবে সরকার চলতে পারে না। তাই মনে হয় বাংলাদেশ অস্থিরতা আরও বাড়বে। তবে এখন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংখ্যালঘু নিপীড়ন ইস্যুতে আমেরিকার অবস্থানকে ভয় পাচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)