ব্রেন টিউমার নিয়েও ৪৪ বছরে সন্তানের জন্ম দিলেন গৃহবধূূ
বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা চলেছে। শেষে সন্তানও ধারণ করলেন মানিকতলার বাসিন্দা মাঝবয়সি করুণা আগরওয়াল (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু ললাটলিখন ছিল যে অনেকটাই অন্যরকম। গর্ভস্থ সন্তানের বয়স যখন সাড়ে ৫ মাস, অসম্ভব মাথা যন্ত্রণা শুরু হল ভাবী মায়ের। স্ত্রীকে নিয়ে ভবানীপুর, হাওড়া, কাঁকুড়গাছির একটার পর একটা হাসপাতাল, এই ডাক্তার, সেই নার্সিংহোম—জীবন আর ছোটাছুটি যেন সমার্থক হয়ে দাঁড়াল রাকেশ আগরওয়ালের। সন্তানের যখন পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে গিয়েছে, সেসময় কাঁকুড়গাছির এক চিকিৎসক মহিলার এমআরআই করাতেই ধরা পড়ল মারাত্মক বিপর্যয়! পেল্লায় সাইজের ব্রেন টিউমার বাসা বেঁধেছে তাঁর। আর সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মস্তিষ্কের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে। এই অবস্থায় প্রসব? অধিকাংশের কাছেই বিষয়টি কল্পনার অতীত। সিংহভাগ ক্ষেত্রে সবধরনের বিশেষজ্ঞের অভাব থাকা ছোট-মাঝারি বেসরকারি ক্ষেত্রে বিপদ আরও বেশি। শনিবার সেই চিকিৎসকের ফোন আসার পর ভাবী মায়ের অবস্থার বিস্তারিত বিবরণ জেনে কেমন যেন একটা জেদ চেপে গিয়েছিল মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পার্থসারথি মিত্রের। অ্যানাসথেটিস্টকে ফোন করে বলেছিলেন, কঠিন কাজ। খুব কঠিন কাজ! কিন্তু হাল ছেড়ো না।
শনিবার বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ মেডিক্যালের ইডেন বাড়িতে আনা হয় করুণাদেবীকে। আধ ঘণ্টা-৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রসূতিকে তোলা হয় অপারেশন থিয়েটারে। এদিকে মাথায় ওইরকম একটি ব্রেন টিউমারের (নিওপ্লাস্টিক টিউমার) কারণে প্রেশার তখন মারাত্মক বেশি, অন্যদিকে শ্বাসকষ্টও হচ্ছে তাঁর। আচ্ছন্ন অবস্থা মায়ের। অজ্ঞান করলে ওটি টেবিলেই ঘনিয়ে আসতে পারে মৃত্যু। এই অবস্থায় লড়াইয়ে নেমেই সুস্থ সন্তান প্রসব করালেন সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মিত্র ও তাঁর টিম।
তুমুল জটিলতা সত্ত্বেও নিরাপদ প্রসবের নয়া নজির তৈরি হল ঐতিহাসিক ইডেন বাড়িতে। দু’দিন ভেন্টিলেশনের কঠিন সময় পার করে এখন মা অনেকটাই সুস্থ। ভালোই আছে প্রায় আড়াই কেজি ওজনের পুত্রসন্তানটিও।
স্বভাবতই চিকিৎসকদের কাজে মুগ্ধ সদ্য পিতা রাকেশ। বললেন, ‘সামান্য ফেরিওয়ালার কাজ করি। ২০ বছর ধরে সন্তান চাইছি। অবশেষে সে এল। মেডিক্যালের চিকিৎসকরা যা করেছেন, ভুলব না কোনওদিনই।’ যাঁর নেতৃত্বে প্রসব, সেই পার্থসারথিবাবু বললেন, ‘৯৯ শতাংশ কৃতিত্ব অ্যানাসথেটিস্ট এবং আমাদের পিজিটিদের। নিউরোলজিস্টদেরও দেখানো হয়েছে। এরপর আমরা ধাপে ধাপে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা করব।’ অপারেশন টিমের অন্যতম অ্যানাসথেটিস্ট ডাঃ শান্তনু হাজরা বলেন, ‘ওই মহিলাকে যখন ওটি টেবিলে আনা হয়, প্রেশার ছিল ২০০/১১০। ব্রেন টিউমারের জন্য সে সাংঘাতিক অবস্থা! এই অবস্থায় অ্যানাসথেশিয়া করলে প্রতিমুহূর্তে প্রেশার বেড়ে গিয়ে আরও রক্তক্ষরণ এবং অস্ত্রোপচারকালেই মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল। ঈশ্বরের আশীর্বাদ—বিপদ কাটানো গিয়েছে।