ভুয়ো নথিতে ইউরোপ-দুবাইয়ে বহু অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি!
বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জাল নথি দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট হাতে পাওয়া অনুপ্রবেশকারীদের একটা বড় অংশ দুবাই, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গিয়েছে। খুব অল্প সংখ্যায় এদেশে রয়েছে। জাল পাসপোর্ট কাণ্ডের তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছে সিকিওরিটি কন্ট্রোলের অফিসারদের (এসসিও)। সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্ত নথি দিয়ে বিভিন্ন বিমানবন্দরে লুক আউট নোটিসও পাঠানো হচ্ছে। এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় বসিরহাট পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের এক কর্মী তারকনাথ সেনকে গ্রেপ্তার করেছে এসসিও।
পাসপোর্ট জালিয়াতির কিং পিন সমরেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের ‘ভারতীয় ঠিকানা’ দেখানো হতো বসিরহাট ও বনগাঁ এলাকায়। যেগুলির কোনও অস্তিত্বই নেই। সমরেশ তদন্তকারীদের জানিয়েছে, সীমান্তে এজেন্ট হিসেবে কাজ করার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় বসিরহাটে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের কর্মী তারকনাথের। সে প্রথমে নিজেই নথি নিয়ে যেত ওই কর্মীর কাছে। সঙ্গে থাকত বেআইনিভাবে আসা বাংলাদেশি নাগরিকরা। পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্রের ওই কর্মী নথি ও কাগজ যাচাই না করেই পোর্টলে তথ্য আপলোড করে দিত। সমরেশের সঙ্গে তারকনাথের ঘনিষ্ঠতা বাড়ার পর, তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্রে আর যেতে হতো না বাংলাদেশিদের। যাচাইয়ের জন্য সমরেশকে ফোন করত তারকনাথ। তার স্ত্রী সমস্ত জাল নথি সেখানে নিয়ে যেতেন। সেগুলি পরীক্ষা না করেই আপলোড করে দিত ওই কর্মী। এর বিনিময়ে প্রতি পাসপোর্ট পিছু তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিত তারকনাথ। তার মাধ্যমে দুশোর বেশি পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে বলে খবর। অনুপ্রবেশকারীদের জন্য পাসপোর্ট তৈরি হচ্ছে, জানার পরেও শীর্ষস্তরকে তা জানায়নি তারকনাথ। এদিন বসিরহাটে হানা দিয়ে তারকনাথকে গ্রেপ্তার করেন তদন্তকারীরা। জানা যাচ্ছে সে নিজেও টাকার বিনিময়ে লোক পাচারের কাজে জড়িত। তারও একাধিক এজেন্ট রয়েছে। সে নিজেও ভুয়ো নথি তৈরি করে থাকে। একইসঙ্গে এই ঘটনায় ডাক বিভাগে পাঁচ-ছয়জন অস্থায়ী কর্মীর নাম সমরেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছেন তদন্তকারীরা।
যারা এহেন পাসপোর্ট হাতে পেয়েছে, তাদের খুঁজে বের করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ অফিসারদের। সেই কারণে সমরেশ সহ বিভিন্ন এজেন্টদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। অনুপ্রবেশকারীরা পাসপোর্ট আবেদনের সময় যে মোবাইল নম্বর জমা দিয়েছিল, তার সূত্র ধরে অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। ধৃত সমরেশ সিটের অফিসারদের জানিয়েছে, জাল নথি নিয়ে পাসপোর্ট নেওয়া বাংলাদেশিদের বড় অংশ দুবাই, সৌদি আরব ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে গিয়েছে। সেখানকার বিভিন্ন জায়গায় তারা কাজ করছে। তাদের পাসপোর্টের সমস্ত নথি বিভিন্ন দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। যাতে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত আনা যায়। পাশাপাশি দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে তাদের পাসপোর্টের নথি দিয়ে লুক আউট নোটিস পাঠানো হচ্ছে। যাতে এহেন লোকজনের দেশে এলেই বিমানবন্দরে আটক করা যায়। আর দেশে থাকা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা দক্ষিণ ভারতে কাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে। এজেন্টের মাধ্যমেই তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে এভাবে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে জঙ্গি গোষ্ঠীর কোনও স্লিপার সেলেৱ সদস্য আছে কি না, তাও জানার চেষ্টা চলছে।