• মেলা ঘিরে নির্মাণে জোর, সাজছে গড়ভবানীপুর
    বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া: বড়দিনের ছুটি মানেই উরু উরু মন। দূরপাল্লার সফরই হোক বা কাছেপিঠের বেড়ানো— আম বাঙালির কাছে এই সময়টা বেড়ানোর জন্য আদর্শ। চেনা জায়গায় বেড়ানোর পাশাপাশি অচেনা গন্তব্যেও ছোটেন অনেকে। খুঁজে বেড়ান ইতিহাসের ছেঁড়া ছেঁড়া ছবি। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে এমনই এক জায়গা উদয়নারায়ণপুরের কাছে গড়ভবানীপুরের রায়বাঘিনী রানি ভবশঙ্করী স্মৃতি পর্যটন কেন্দ্র। ২৬ ডিসেম্বর এখানে মেলা বসবে, চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই মেলাকে ঘিরেই এখন সাজ সাজ রব গড়ভবানীপুরে।


    এখানে কান পাতলে এখনও শোনা যায় রানি রায়বাঘিনী ভবশঙ্করীর দোর্দন্ডপ্রতাপের কথা। প্রায় ১০ একর জমিতে গড়ে উঠছে রায়বাঘিনী রানি ভবশঙ্করী স্মৃতি পর্যটন কেন্দ্র। আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম পর্যন্ত গড়ভবানীপুর ছিল ভুড়শুট পরগনার রাজধানী। চতুরানন মহানিয়োগী হুগলি জেলার দিলাকাশ থেকে এই রাজধানী গড়ভবানীপুরে নিয়ে আসেন। বর্তমান হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, মেদিনীপুর নিয়ে এই রাজ্য বিস্তৃত ছিল। এই রাজপরিবারে বীরাঙ্গনা রানি ছিলেন রাজা রুদ্রনারায়ণের পত্নী ভবশঙ্করী। পাঠান সুলতান কতুল খানের সেনাপতি ওসমান খাঁকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। রানির এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে মোগল সম্রাট আকবর সেনাপতি মান সিংকে গড়ভবানীপুরে পাঠিয়ে রানিকে ‘রায়বাঘিনী’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই জায়গাটিকে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।


    প্রশাসন সূত্রে খবর, এই পর্যটন কেন্দ্রে ইকো পার্ক, শিশু উদ্যান, পদ্মপুকুর, অর্কিড বাগান, নার্সারি, প্রজাপতি উদ্যান, রঙিন মাছের পুকুর, মনীষীদের মূর্তি, ফোয়ারা এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য বসার জায়গা সবই তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য সবুজে ঘেরা ইকো পার্কে থাকছে ক্যাফেটেরিয়া, গাছবাড়ির আদলে পর্যটক আবাস, ভগ্নপ্রায় গোপীনাথ জিউ মন্দিরের সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন, রাজবাড়িতে মিউজিয়াম। সব মিলিয়ে খরচ চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যেই স্থানীয় সাংসদ সাজদা আহমেদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ২৫ লক্ষ টাকা মেলায় স্থায়ী মুক্ত মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। এর সঙ্গে রয়েছে জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তা। পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে চার শয্যার পর্যটক আবাস, সম্মেলন কক্ষ, শৌচালয়। ঝিলে মাছ ধরা ও বোটিংয়ের ব্যবস্থাও থাকছে এখানে। 


    ইতিমধ্যে পর্যটন কেন্দ্রের দু’দিকে সুদৃশ্য প্রবেশদ্বার নির্মাণ করা ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ হয়েছে। চলছে একাধিক নির্মাণকাজ। রায়বাঘিনী রানি ভবশঙ্করী স্মৃতি রক্ষা সমিতির সম্পাদক সুখেন্দু চন্দ্র বলেন, প্রতি বছরই বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ আসেন এই মেলায়। আশা করছি, এবার ভিড় আরও বাড়বে। হাওড়া স্টেশন বা কলকাতা থেকে বাসে আসতে বড়জোর আড়াই ঘণ্টা লাগতে পারে। স্মৃতিরক্ষা সমিতির সভাপতি তথা উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, বাম আমলে এলাকার প্রাচীন ইতিহাস হারিয়ে যেতে বসেছিল। নতুন সরকার আসার পর আমরা সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে তুলে ধরার 


    উদ্যোগ নিয়েছি।
  • Link to this news (বর্তমান)