নাগরিকদের সমস্যা মেটাতে কলকাতা পুরসভায় অনেক দিনই চালু হয়েছে ‘টক–টু–মেয়র’ অনুষ্ঠান। এই লাইভ অনুষ্ঠানে সরাসরি মেয়রকে ফোন করে যে কোনও সমস্যার কথা জানাতে পারেন নাগরিকরা। মেয়রকে এক বার ফোনে ধরতে পারলে খুব সহজে মুশকিল আসান হয় বহু সময়ে। তাতে টক–টু–মেয়র অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা বাড়লেও পুরসভার ঘাড়ে বিপুল আর্থিক বোঝা চাপছে বলেই পুর–আধিকারিকদের বক্তব্য।
তাঁরা জানাচ্ছেন, টক–টু মেয়রে ফোন করে অনেকে তাঁদের ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। যেটা পুরসভার করারই কথা নয়। ফলে এই খাতে পুর–কোষাগার থেকে অনেক টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। আবার মেয়রের নির্দেশ পালন না করলে অফিসারদের বকুনি খেতে হয়। ফলে উভয়সঙ্কটে পুর–আধিকারিকরা।
পুরসভার এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, ‘কারও হয়তো বাড়ির ভিতরে জলের লাইনে সমস্যা রয়েছে। সে জন্যে বাড়িতে ঠিকমতো জল আসছে না। এই সমস্যা মেটাতে অনেকে প্লাম্বারকে না ডেকে সরাসরি টক–টু–মেয়রে ফোন করছেন। শোনামাত্রই মেয়র জল সরবরাহ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের সমস্যা মিটিয়ে দিতে বলছেন। মেয়রের কথা রাখতে জরুরি কাজ ফেলে ছুটতে হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারদের। জলের লাইন ঠিক করতে যে খরচ হচ্ছে সেটাও পুরসভাকেই বহন করতে হচ্ছে।
যদিও সেটা বাড়ির মালিকেরই দেওয়ার কথা।’ শুধু জলের লাইন ঠিক করাই নয়, বাড়ির নর্দমা ও জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্যেও অনেকে টক–টু–মেয়র অনুষ্ঠানকে হাতিয়ার করছেন। কেউ আবার বাড়ির সামনের ফুটপাথ মেরামত করিয়ে নিচ্ছেন। কেউ গাছ কাটিয়ে নিচ্ছেন। কাজ না হলে অনেকে ফের টক–টু–মেয়রে ফোন করে অফিসারদের বিরুদ্ধে নালিশ করছেন। তাই টক–টু–মেয়রে কেউ অভিযোগ জানালেই অফিসাররা তৎপর হয়ে কাজে ঝাঁপাচ্ছেন।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘অনেকে না জেনেবুঝেই টক–টু–মেয়র অনুষ্ঠানে ফোন করেন। এমনকী বাইরের পুর–এলাকা থেকেও অনেক ফোন আসে। কোন কাজটা পুরসভা করতে পারে, আর কোনটা পারে না, সেটা অনেকে বোঝেন না। আমরা চেষ্টা করি, মানুষকে যতটা সম্ভব রিলিফ দেওয়ার। তাতে পুরসভার কিছু খরচ হলেও হতে পারে। তবে সেটা আহামরি কিছু নয়।’
যদিও খরচ অনেকটাই বলে জানাচ্ছেন পুর–আধিকারিকরা। আর্থিক সঙ্কটে জেরবার পুরসভার তরফে ব্যক্তিগত কাজে টাকা খরচের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। অর্থ বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘সরকারি টাকা কখনও ব্যক্তিগত কাজে খরচ করা যায় না। এ নিয়ে ভবিষ্যতে ক্যাগও প্রশ্ন তুলতে পারে। সেটা সবারই মাথায় রাখা উচিত।’
পুরসভা সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে শুধুমাত্র ঠিকাদারদের বকেয়াই প্রায় ৯৪০ কোটি টাকা। কাজ করার পর টাকা পেতে প্রায় দু’বছর লেগে যাচ্ছে ঠিকাদারদের। সে কারণে অনেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে সমস্যায় পড়ছেন পুরকর্তারা। জঞ্জাল সাফাই বিভাগের এক ঠিকাদারের কথায়, ‘আমি ২০২২–এর মার্চে যে বিলটা জমা দিয়েছিলাম তার টাকা এখনও পাইনি। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে লেবারদের টাকা মিটিয়েছি।’