• চুরি করে জেলে! ‘দাদা’ রেডি বেলে
    এই সময় | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি

    একদল চুরি করবে, বাইচান্স ধরা পড়ে গেলে আরও একদল তাঁকে জামিন করাতে রেডি! অদ্ভুত এক বোঝাপড়ায় এভাবেই চলছে শহরের চোর্যবৃত্তি।

    চোরেদের জামিনের জন্যও এখন বিশেষ দল তৈরি হয়েছে শিলিগুড়িতে। বাড়িতে রেকি থেকে চুরি, পুলিশের গতিবিধির ওপর নজরদারি, ধরা পড়লে থানায় গিয়ে ওকালতি, চোরাই সামগ্রী কেনা এবং শেষে জামিনেরও ব্যবস্থা করা। সব যেন এক প্যাকেজে। অভিযোগ, পিছন থেকে এ কাজে মদত যোগাচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে পাড়ার দাদারাও।

    অভিযোগ, চুরির অভিযোগে কাউকে ধরে নিয়ে এলেই অভিযুক্তদের হয়ে ওকালতি করতে পাড়ার দাদারা চলে আসছেন থানায়। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলায় এমন বিষয় সামলাতে হয়েছে শিলিগুড়ির বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্তাদের। প্রধাননগর থানায় দিন দশেক আগে চোরেদের ছাড়াতে এমন কিছু দাদারা হাজির হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন আবার সপ্তাহ খানেক আগেই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।

    একই ঘটনা ঘটেছে গত সপ্তাহে মাটিগাড়া থানাতেও। এক নাবালককে মোবাইল চোর সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ওই নাবালককে ছাড়াতে থানায় এক আইনজীবী চলে আসেন। বিষয়টি সম্পর্কে তখনও কেউ কিছু না জানলেও ওই নেটওয়ার্কের লোকেরা আইনজীবীকেই থানায় পাঠিয়ে দেন।

    ইতিমধ্যে চোরেদের সাহায্যকারী ওই বিশেষ দলকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি রাকেশ সিংয়ের বক্তব্য, ‘চোর ধরা হলে পিছনে কারা রয়েছে,কী ভাবে কাজ হয় সবটাই দেখা হচ্ছে।’

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন থানা এলাকায় চোরেদের দল তৈরি হয়েছে। যে যার নিজের এলাকায় রাতে অপারেশন চালায়। কেউ একে অপরের এলাকায় ঢোকে না। এই দলের সদস্যদের একেক জনের একেক রকম কাজ। কেউ পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বাড়িতে নজর রাখে কোন বাড়িতে লোক নেই, কোন বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে খালি, সে সব রেকি করে। এরপর যাদের কাঁধে চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের দায়িত্ব, তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে অপারেশনে বেরিয়ে পড়ে।

    অপারেশনের পরে চোরাই মাল সোজা চলে যায় চুরির সামগ্রী কেনার কারবারিদের কাছে। মোটা টাকা নিয়ে চোরের দল গা ঢাকা দেয়। চোরাই সোনা হলে সঙ্গে সঙ্গে কারবারিরা তা গলিয়ে ফেলেন। আর অন্য সামগ্রী হলে এক থেকে দু’দিনের মধ্যে অন্য জেলায় পাচার করে দেন। ফলে চোর ধরা পড়লেও চোরাই সামগ্রী আর উদ্ধার হয় না। আবার চোরকে পাকড়াও করা গেলেও, চোরাই সামগ্রী যারা কেনেন, তাঁরাই আইনজীবী ধরে অভিযুক্তদের জামিন করিয়ে দেন। অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে বেরিয়ে ফের চুরি করে কারবারিদের সেই টাকা মিটিয়ে দেন। এই ভাবেই শিলিগুড়িতে চোর–চক্রের কারবার চলছে রমরমিয়ে।

  • Link to this news (এই সময়)