• বাস্তবের ‘‌পুষ্পা’‌, দুই লাল চন্দন কাঠ পাচারকারীকে কঠোর শাস্তি আদালতের...
    আজকাল | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • অতীশ সেন, ডুয়ার্স:‌ ব্লকবাস্টার ছবি পুষ্পা: দ্য রাইজ–এর চিত্রনাট্যের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার এর পশ্চিম সাঁতালি গ্রামের ঘটনাটির সামঞ্জস্য থাকলেও বাস্তব জীবনের লাল চন্দন কাঠ পাচারকারীরা আইন থেকে পালাতে পারল না। এই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার অনেক আগেই ছবিতে দেখানো ঘটনার মতোই আলিপুরদুয়ারের পাচারকারীরা চন্দন কাঠ মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। তবে মাদারিহাট রেঞ্জের বনদপ্তরের কর্মীদের তৎপরতায় এই পাচার চক্রের পর্দাফাঁস হয়। ঘটনার প্রায় ন’‌বছর পর লাল চন্দন কাঠের চোরাকারবারে যুক্ত দু’‌জন সোমবার আলিপুরদুয়ার জেলা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হল। জলদাপাড়ার ডিএফও পারভীন কাসওয়ান জানান, ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই মাদারিহাট রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসারের নেতৃত্বে পশ্চিম সাঁতালি গ্রামে অভিযান চালিয়ে মাটির নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ লাল চন্দন কাঠ উদ্ধার হয়েছিল। রামাল কার্জি এবং মালতী নার্জিনারিকে এই ঘটনায় অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করে বনদপ্তর। আলিপুরদুয়ারের থার্ড কোর্টের বিচারপতি ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে এই মামলার রায় প্রদান করেন। দুই অভিযুক্তকে ন’‌মাসের কারাদন্ড এবং আর্থিক জরিমানা করা হয়। বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি অ্যাক্ট ২০০২ এর ৭ নম্বর ধারা অনুয়ায়ী তাদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। 

    জানা গিয়েছে, রামাল কার্জি এবং মালতী নার্জিনারির বাড়ির মাটির নিচে যথাক্রমে ১৯০০ কেজি এবং ১১০০ কেজি লাল চন্দন কাঠ কাঠ পাওয়া যায়। যার বৈধ নথি তাদের কাছে ছিল না। সোমবারে আদালতের রায় অনুযায়ী, রামাল কার্জিকে নমাসের কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ দশ হাজার পাঁচশ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপর অভিযুক্ত মালতী নার্জিনারিকে একই মেয়াদের কারাদণ্ড এবং ৬০,৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি অ্যাক্ট ২০০২ অনুয়ায়ী লাল চন্দন কাঠ সংরক্ষিত এবং লাল চন্দন গাছ বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এরই সঙ্গে এটি ‘‌কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেন্জারড স্পিসিস’‌ বা CITES–এর তালিকাভুক্ত। উচ্চ বাজারমূল্যের জন্য চন্দন কাঠ চোরাচালানকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই কাঠ মূলত মূল্যবান আসবাবপত্র তৈরির পাশাপাশি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে পাচারের কারণে এই প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে দাঁড়িয়েছে।

     জলদাপাড়ার ডিএফও জানান, এই শাস্তি শুধু পাচারকারীদের জন্য নয়, বরং সমস্ত প্রকৃতিবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা। বাস্তব জীবনে ‘‌পুষ্পা’‌–র মতো অপরাধীদের জন্য আইনই শেষ কথা। বনদপ্তরের তৎপরতা এবং বিচার বিভাগের কড়া অবস্থান প্রমাণ করে, প্রকৃতিকে রক্ষা করার লড়াইয়ে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। এই বছর এটি জলদাপাড়া বনবিভাগের ১৭তম সফল শাস্তির ঘটনা।
  • Link to this news (আজকাল)