৮ মে ২০২৩। অনিমেষ-মাধবীলতাকে যিনি বাঙালির মনে গেঁথে দিয়েছিলেন, নিঃশব্দে চলে গিয়েছিলেন সেদিন। একের পর এক উপন্যাস, পুরস্কার সবকিছু রেখে চলে গিয়েছেন সমরেশ মজুমদার, সঙ্গে রেখে গিয়েছিলেন আরও একটি নীল ডায়েরি। যার ভিতরে সাজানো একের পর এক গীতি-কবিতা। সেই গোপন খাতা থেকে উদ্ধার হওয়া ১০০ গীতি-কবিতার সংকলন প্রকাশ করল পত্রভারতী।
বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা সাহিত্যিকের প্রয়াণের প্রায় এক বছর পর, কন্যা দোয়েল মজুমদার এবং পত্রভারতীর উদ্যোগে শুক্রবার প্রকাশিত হল সমরেশের ষাটের দশকে লেখা ১০০ গীতি-কবিতার সংকলন 'জলসা'। লেখকের প্রয়াণের পর, গোপন খাতা থেকে গীতি-কবিতার আবিষ্কার, কীভাবে?
সমরেশ-কন্যা, যিনি আচমকা আবিষ্কার করেছিলেন অর্ধেক ছেঁড়া, বিবর্ণ নীল ডায়েরি, শোনালেন সেকথা। ২০২১ সালে তিনি ওই ডায়েরি আবিষ্কার করেছিলেন, সমরেশ তখন জীবিত। কিন্তু প্রকাশ তো দূরের কথা, কিশোরকালে, তরুণ বয়সে লেখা ওই ডায়েরি তিনি একপ্রকার ছিনিয়েই নিয়েছিলেন মেয়ের থেকে। সমরেশের মৃত্যুর পর, ২০২৪-এর গোড়ার দিকে দোয়েল ফের আবিষ্কার করেন ওই নীল ডায়েরি। দোয়েল বলেন, 'এই ডায়েরি মূলত লেখা হয়েছিল ১৯৬৫-৭০-এর মধ্যে। তখন আমার মা এবং বাবা বন্ধু। এই রচনার অনুপ্রেরণা তাঁদের বন্ধুত্ব। পড়লেই বুঝতে পারবেন সেকথা। তাতে রয়েছে অদ্ভুত রোম্যান্স, বিশ-তিরিশের কোঠায় যাঁরা, হৃদয় ছুঁয়ে যাবে তাঁদের।'
আনুষ্ঠানিক বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, প্রচেত গুপ্ত, শ্রীজাত, পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ-কন্যা দোয়েল মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্টজনেরা।
সমরেশের প্রয়াণ পরিজন বিয়োগ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাছে। নিজের ভাইয়ের মতো, 'লেখক সমরেশ' হওয়ার আগে থেকেই চিনতেন, তাঁরই মৃত্যু পরবর্তী বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আবেগতাড়িত বর্ষীয়ান সাহিত্যিক। বোর্ডিং হাউসের ঝলমলে যুবক আজও মনের মধ্যে গাঁথা তাঁর। সমরেশ মজুমদার অনুজ সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্তকে স্নেহ করতেন, ভরসা করতেন তাঁর লেখনীতে। প্রচেত গুপ্ত অগ্রজকে স্মরণ করে বললেন, 'কিছু কিছু মৃত্যু যে আসলে মৃত্যু নয়, থেকে যাওয়া, বেঁচে থাকা, আজকের অনুষ্ঠান মনে করাচ্ছে সেটাই।' এক সময়ের ভয় পাওয়া থেকে, অনুজ সাহিত্যিককে অগ্রজের গল্পের প্লট দিয়ে যাওয়া, বললেন দীর্ঘ সময়ের কথা। 'জলসা' হাতে বললেন, 'একজন লেখকের হাজার কথার থেকে প্রাপ্তি তো এটাই, এই বই। '
'জলসা'র ভূমিকা লিখেছেন শ্রীজাত। সমরেশের একান্ত অনুরাগী কবি-সাহিত্যিক বলছেন লেখা জনসমক্ষে পৌঁছে যাওয়ার আগে পড়তে পেরেছেন, এটা তাঁর বড় প্রাপ্তি। প্রকাশ অনুষ্ঠানে বললেন, 'দীর্ঘদিন এক ডায়েরি লেখা গোপন রেখেছিলেন, কী আশ্চর্য সংযম। লিখেছেন, প্রকাশে বাধা দিয়েছেন। নিজেকে আড়ালে রাখার এই চর্চা, এই দ্রুততার জুগে অনেক হারিয়ে যাচ্ছে। এই সংযমের পাঠ যদি নিয়ে চলতে পারি।' তাঁর অন্য লেখার থেকে একেবারে ভিন্ন 'জলসা', এই বইয়ে পাঠক নতুনভাবে চিনবেন সমরেশ মজুমদারকে, প্রত্যয়ী তাঁরা।