জাকিরভাইয়ের চলে যাওয়ার খবর ধাক্কা দিয়ে গেল। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে এত দ্রুত ও আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। ও ছিল পঞ্জাব ঘরানার বাদক, কিন্তু কালক্রমে নিজেই হয়ে উঠেছিল একটি প্রতিষ্ঠান, নিজেই হয়ে উঠেছিল এক ঘরানা। তবলার যে বহুমুখী রূপ থাকতে পারে তা ওর বাজনায় প্রমাণিত। শুধুমাত্র জাকিরের কারণেই বিশ্বে হয়তো হাজার পাঁচেক মানুষ তবলা বাজান আজ। এ বড় কম কথা নয়। ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদ ও পেয়েছিল। আর পেয়েছিল ওর বাবা উস্তাদ আল্লারাখা খান কুরেশির আশীর্বাদ। গুরুর আশীর্বাদে ওর বাজনা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে।
মানুষ হিসেবেও জাকিরভাইয়ের তুলনা ছিল না। ওর শৈশব এবং যৌবন থেকেই দেখেছি খুবই সম্মান করত ওর থেকে বয়সে বড় এবং প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পীদের। পণ্ডিত কিষেণ মহারাজ বা শামতাপ্রসাদরা যখন বাজাতেন, জাকির সবসময় তাঁদের তবলার ব্যাগ বহন করার চেষ্টা করত। সমস্ত সঙ্গীতশিল্পীও ওকে ভালবাসতেন আর ও সবাইকে শ্রদ্ধা করত, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। চেষ্টা করত যুবাদের তুলে ধরার, সামনে নিয়ে আসার। জাকিরের অনেক শিষ্য তৈরি হয়েছে, যাদের মধ্যে উজ্জ্বল অমিত কাভথেকর, আদিত্য কল্যাণপুর, যোগেশ সামসিরা।
আমরা যখনই একসঙ্গে বাজাতাম, স্মরণীয় হয়ে উঠত সেই কনসার্ট। আমরা শেষ বাজিয়েছিলাম দিল্লিতে ২০২৩-এর ডিসেম্বরে। তখনও জানতাম না ওর সঙ্গে আর বাজানো হবে না। অথচ এরপর লন্ডন, আমেরিকায় আমাদের যৌথ ভাবে বাজানোর পরিকল্পনা তৈরি ছিল। ওর মতো ছন্দের বোধ বিরল। ওর ঠেকা ছিল মেট্রোনোমের মতো, নিখুঁত হিসাব এবং গাণিতিক মাপ তার। খুবই ‘ক্যারিশমাটিক’ শিল্পী। ও চলে যাওয়ায় বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল বিশ্ব এবং আমাদের দেশের তবলা জগতের, সঙ্গীতের। আজ এটুকুই আশা, ওর এবং ওর বাবার পঞ্জাব ঘরানা প্রবাহিত হবে ভবিষ্যতের দিকে।
আমরা কেউই ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি ও চলে যাবে। তবে শারীরিক ভাবে চলে গেলেও আমাদের হৃদয়ে জাকিরভাই থাকবে সব সময়ে।