• অন্যের নাড়া পোড়ানোর আগুনে পুড়‍ল ১৯ বিঘা জমির পাকা ধান
    এই সময় | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, বর্ধমান: ধান কাটার পর ধানের যে অবশিষ্ট অংশ পড়ে থাকে তাতে আগুন লাগিয়ে দেন চাষিরা। প্রচলিত ভাষায় যা নাড়া পোড়ানো নামে পরিচিত। এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় বলে একটা ভুল ধারণা কাজ করে চাষিদের মধ্যে। কিন্তু আদতে তা নয়। বরং কুয়াশার সঙ্গে পোড়ানো নাড়ার ধোঁয়া এক হয়ে জমাট বেঁধে বাতাসে ঘুরে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ায়। আর একটা বড় সমস্যা হলো, অনেক সময়ে নাড়া পোড়ানোর সময়ে সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পাশের জমির পাকা ধান।

    যদিও ধারাবাহিক সচেতনতা প্রচারের জেরে এ বছর কিছুটা হলেও নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা কমেছে বলে দাবি কৃষি দপ্তরের। কমেছে পাশের জমির ধান নষ্টের পরিমাণও।

    এ ব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান জেলার এক কৃষি আধিকারিক বলেন, ‘ধরা যাক, ধান কাটা হয়ে গিয়েছে এমন জমিতে নাড়ায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও দেখা যায়, হাওয়ায় সেই আগুনের অংশ পাশের জমিতে গিয়ে পড়ল। আর সেই জমিতে না কাটা পাকা ধান পুড়ে গেল।’

    কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে বিভিন্ন ব্লক ও থানায় এ ধরনের প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছিল। সে বছর এ ভাবে প্রায় ৮০ বিঘা জমির ধান পুড়ে গিয়েছিল। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫২ বিঘাতে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ১৯ বিঘা জমিতে এ ভাবে পাশের জমির নাড়ার আগুন ছড়িয়ে পাকা ধান পুড়েছে।’

    জেলা কৃষি অধিকর্তা নকুলচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘গত ৩ নভেম্বর জেলায় আমরা ‘ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো প্রতিরোধ দিবস’ পালন করেছি। বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় চাষিদের নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালিয়েছি। মাইক থেকে হ্যান্ডবিলের মাধ্যমে নাড়া পোড়ানোর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে।’ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তার পরেও বর্ধমান–১ ও ২ ব্লক, গলসি, ভাতার, বলগোনা, রায়না এলাকার অনেক গ্রামে জমিতে নাড়া পোড়ানো হয়েছে। পাশে না কাটা ধানজমি থাকা সত্ত্বেও রাতের দিকে আগুন লাগানো হয়েছে।

    এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি অধিকর্তা বলেন, ‘এত কিছুর পরেও নাড়া পোড়ানো হচ্ছে বলে আমরাও খবর পেয়েছি। তবে পরিমাণটা আগে থেকে অনেকটাই কমেছে। নাড়া না পুড়িয়ে সেটাকে জৈব সারে পরিণত করার বিষয়টি চাষিরা বুঝতে পারলে একসময়ে নাড়া পোড়ানো একেবারে বন্ধ হতে পারে।’

    পুরসা গ্রামের চাষি সহদেব ঘোষের বক্তব্য, ‘আমরা এখনও সচেতন না হলে জমির বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাবে। বারবার সচেতন করার পরেও যাঁরা এই কাজ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’ যদিও হাটগোবিন্দপুরের চাষি মিলন সাহার প্রশ্ন, ‘কৃষি দপ্তর বলছে, জমির নাড়ার অংশ কেটে জমিতেই একটি জায়গায় গর্ত করে পুঁতে জলে ভিজিয়ে পচানোর জন্য। কিন্তু এতে তিন মাস সময় লেগে যাবে। এতদিন কি জমিতে চাষ না করে ফেলে রাখা সম্ভব?’

  • Link to this news (এই সময়)