রনি চৌধুরী, বানারহাট
‘যমুনা কিনারে শাহজাহানের স্বপ্ন শতদল...।’এ গান একসময় প্রেমিকদের বুকে আলোড়ন ফেলেছিল। সেই সময়ে টিভি ছিল সাদাকালো। মন ছিল রঙিন। উল্টে–পাল্টে গিয়েছে কত কিছুই। খোদ তাজমহলই উল্টে গিয়েছে ডুয়ার্সে। তবে এটা সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল নয় অবশ্যই। এখানে নেই যমুনা নদীও। যে নদী আছে, তার নাম ডায়না।
তবুও, নকল তাজমহলও কি সত্যি উল্টে দেওয়া যেতে পারে? শুনতে অবাক লাগলেও, এতে সাড়া পড়ে গিয়েছে ডুয়ার্সে। এখানে এলেই দেখা মিলবে উল্টো তাজমহলের। এর সৌজন্যে নতুন বছরে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে ডায়না নদীর ধারে থাকা ‘ফান সিটি’ পর্যটনকেন্দ্রটি।
সামনেই বড়দিন, তারপরই নতুন বছর। এই সময় পর্যটকদের ভিড় বাড়ে ডুয়ার্সে। পর্যটকদের আকর্ষিত করতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ী শেখ জিয়াউর রহমান। বানারহাট থানার আপার কলাবাড়ি এলাকায় জঙ্গলে ঘেরা নদীর ধারে গড়ে উঠেছে উল্টো তাজমহল। সেই সঙ্গে মিশরের পিরামিড ও একটি বিমানও। দেখলে মনে হবে যেন, শূন্যে ভাসছে তাজমহল। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় আট মাস। এই পর্যটনকেন্দ্রে তাজমহলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে।
এর আগে পর্যটকদের টানতে উল্টো বাড়ি তৈরি করেছিলেন ফান সিটির কর্ণধার জিয়াউর, যা উত্তরবঙ্গ–সহ রাজ্যবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এই উল্টো তাজমহলও ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলে আশাবাদী এই পর্যটন ব্যবসায়ী। বলেন, ‘নতুন বছরে পর্যটকদের জন্য উপহার হিসেবে রেখেছি উল্টো তাজমহল ও মিশরের পিরামিড। এটা কংক্রিটের তৈরি, স্থায়ী নির্মাণ। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বরাবরই আমরা ব্যতিক্রমী ভাবনা নিয়ে এগোই। এখন থেকেই মানুষজন আসতে শুরু করেছেন।’
এই পর্যটন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে ওয়েবপুল। বাচ্চাদের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলার সরঞ্জাম এবং পশুপাখির মূর্তি। প্রবেশ মূল্য করা হয়েছে জনপ্রতি ৭০ টাকা। এলাকা হিসেবে টিকিটের দাম কম নয়, তবুও উল্টো তাজমহল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সব বয়সের মানুষেরা। বাবা–মায়েরা আসছেন সন্তানদের নিয়ে। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ছাড় রয়েছে টিকিটে। পর্যটকরা চাইলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। পাশেই রয়েছে ডায়না নদী, আর তার গা ঘেঁষে রয়েছে ডায়না জঙ্গল। সেই নদীতে পা দোলাতে দোলাতে পিকনিকের আমেজ নিতে পারবেন পর্যটকরা।
পর্যটক রিনা বর্মন বলেন, ‘আমি উল্টো তাজমহল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। জীবনে প্রথম এমন তাজমহল দেখলাম।’ উল্টো তাজমহলের সামনে পটাপট সেলফি উঠছে, সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট। পর্যটক মজিবুল আলম বলেন, ‘আমার তো বেশ মজা লাগল। এমনও হয়! ছোটরা খুব আনন্দ পাচ্ছে।’