• মনকেমনের ময়দানে ‘মনমরা’ মহদিপুরের মনোহরা
    এই সময় | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • কৌশিক দে, মালদা

    ক্ষীর, নারকেল, চিনি, গুড় আর এলাচ। হাতের নাগালেই মেলে উপকরণ। আর এ সব দিয়েই সেই কবে থেকেই মন হরণ করে আসছে মালদার মহদিপুরের মনোহরা। যে মিষ্টি শুধু এ পার বাংলাতেই নয়, ও পার বাংলাতেও সমান জনপ্রিয়। তবে পড়শি বাংলাদেশ ইদানীং ‘আগের মতো’ না-থাকায় সেই মনোহরাও যেন কিঞ্চিৎ ‘মনমরা’।

    ভারতে ঘুরতে এসে বাংলাদেশের কেউ মনোহরা না নিয়ে দেশে ফিরছেন কিংবা কেউ মনোহরা ছাড়াই বাংলাদেশের কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন— এমন ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না কেউই। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির জন্য আপাতত মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে দুই বাংলার লোকজনের যাতায়াত প্রায় বন্ধ। আর সেই কারণে মনোহরা বিক্রেতাদেরও মনখারাপ।

    মালদার মহদিপুর সীমান্তেই এখনও হাতেগোনা কয়েকজন মনোহরা তৈরি করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভাসানু শেখ। তিনি বলছেন, ‘আমার বয়স সত্তর। তবে কবে থেকে এই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে, তা আমরা জানি না। কেউ কেউ তো মোঘল-পাল আমলের কথাও বলেন। সত্যি, মিথ্যে জানি না। তবে এর স্বাদ মন হরণ করে নেয় বলে এই মিষ্টি সকলের কাছে মনোহরা নামে পরিচিত।’

    মহদিপুরের আর এক মনোহরা বিক্রেতা রাজু ঘোষ বলেন, ‘বাবার হাত ধরেই এই মিষ্টি তৈরি করতে শিখেছি। দোকানে দশ জন কারিগর কাজ করেন। মূলত ক্ষীর, নারকেল, চিনি আর খেজুরের গুড়ের সঙ্গে এলাচ মিশিয়ে এই মিষ্টি তৈরি করা হয়। প্রতিটির দাম সাত থেকে দশ টাকা। এখানকার মতো ও পার বাংলাতেও মনোহরার বিরাট চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সীমান্তে এখন যাতায়াত বন্ধ। তাই মনোহরাও আর বাংলাদেশে পাঠানো যাচ্ছে না।’

    মহদিপুরে শ্বশুরবাড়ি মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষের। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির প্রত্যেকের প্রিয় মিষ্টি মনোহরা। ফলে আত্মীয়-স্বজন বা দলের নেতা-কর্মীদের কেউ বাড়িতে এলে চা-পর্বের আগে মিষ্টির প্লেটে অন্য কিছু থাকুক বা না-থাকুক মনোহরা থাকেই। এই মিষ্টি আমাদের মালদার গর্ব।’

    ইংরেজবাজারের মালঞ্চপল্লির বাসিন্দা সুশান্ত সরকার। বাংলাদেশের নাটোরের রবিহাট এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি। সুশান্ত বলেন, ‘ও পার থেকে যখন আত্মীয়েরা এসেছেন বা আমি শ্বশুরবাড়ি গিয়েছি, প্রতিবারই উপহার হিসেবে প্রথম তালিকায় থেকেছে মনোহরা। এখন তো আর শ্বশুরবাড়ি যেতে পারছি না। ফলে মনোহরার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজনও বেশ মনখারাপ করেন।’

    তবে মনকেমনের এই আবহে পর্যটকদের সৌজন্যে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পাচ্ছেন মনোহরা বিক্রেতারা। ঐতিহাসিক নিদর্শন কেন্দ্র গৌড় এলাকাতে প্রায় প্রতিদিনই ঘুরতে আসেন বহু পর্যটক। তাঁদের কেউ কেউ আগে থেকেই মনোহরার কথা শুনেছেন। যাঁরা শোনেননি তাঁরাও এই মিষঅটির কথা জানতে পারেন গাইড কিংবা স্থানীয় লোকজনের থেকে। স্বাদ ও গুণগতমান পছন্দ হতেই মনোহরা কিনে বাড়ি ফিরছেন তাঁরাও।

  • Link to this news (এই সময়)