সিবিআই সূত্রের খবর, সংবিধান অনুযায়ী, সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৪৬-এর পাঁচ এবং ছ’নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করতে হয়। ছ’নম্বর ধারায় নির্দেশ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্মতি ছাড়া আর্থিক দুর্নীতি-সহ অন্য কোনও মামলায় এফআইআর দায়ের করা যাবে না। এ রাজ্যে ১৯৮৯ সাল থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। ২০১৮-র আগে পর্যন্ত তাতে রাজ্যের তরফে সম্মতিতে বাধা ছিল না।
এ রাজ্যে সিবিআইয়ের চারটির মধ্যে তিনটি দফতরই আর্থিক প্রতারণার তদন্ত করে। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি অফিসারদের দুর্নীতি, সরকারি দফতরের দুর্নীতির তদন্ত ওই তিনটি দফতরের আওতায়। কিন্তু রাজ্যের সায় না-মেলায় দুর্নীতির হদিস পেয়েও সিবিআইয়ের তরফে পদক্ষেপ করা কঠিন হয়ে পড়ছে, দাবি সূত্রের।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “অনেক কীর্তিমান রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারই আমাদের গোয়েন্দাদের ফাঁদে পা দিয়ে ধরা পড়েছে। আদালতে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হত। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্যের সম্মতি না থাকায় ওই সব দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মী, আধিকারিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের আধিকারিক, কর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুই করা যাচ্ছে না।”
তা হলে? ওই কর্তা বলেন, “এখন শুধু হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করতে পারে সিবিআই। এ ছাড়া অন্য কোনও তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে না।” সিবিআই তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, তদন্তে রাজ্যের অনুমতি না পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কেও দুর্নীতি চক্র জমিয়ে বসেছে।
সিবিআই কর্তাদের দাবি, গত কয়েক বছরে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে প্রতিটি মামলার জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জবাব আসেনি। রাজ্য সম্মতি তুলে নেওয়ার পর বিষয়টি এখন শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন। জেল হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত রাজ্য সরকারি আধিকারিক, কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও রাজ্যের কাছে আবেদন করে সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে না, অভিযোগ সিবিআইয়ের। তাদের দাবি, রাজ্যের সম্মতি না থাকায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালত আইন অনুযায়ী চার্জশিট গ্রহণ করছে না এবং বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “বিষয়টি শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন। সিবিআইও ওয়াকিবহাল তা নিয়ে। তাই মন্তব্য করা যাবে না।”