অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি
ঝকঝকে নীল আকাশের নীচে সবুজ ছড়িয়ে আছে। তার মাথা ছুঁয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের পাখি। তাদের ডানার বাহার দেখার মতো। একেবারে ক্যালেন্ডার থেকে উঠে আসা এই দৃশ্য ক্রমে হারিয়ে যেতে পারে। সবুজ ধ্বংসের যজ্ঞ চলছে দোমহনী ঝিলের বিস্তীর্ণ জায়গায়। সবার চোখের সামনে নির্বিঘ্নে দুষ্কৃতীরা গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সবই ঘটছে দিনের আলোয়। কিন্তু বাধা দেওয়ার কেউ নেই!
ময়নাগুড়ি ব্লকের তিস্তা সেতু সংলগ্ন দোমহনী ঝিলের বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে চলছে অবাধে বৃক্ষচ্ছেদন। প্রস্তাবিত পক্ষিনিবাস তো হয়নি, এ বার অরণ্য মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দিনের পর দিন ধরে অবাধে চলছে গাছ কাটার প্রক্রিয়া। পরিযায়ী পাখির বিচরণভূমির গা ঘেঁষে দেদার চুরি হয়ে যাচ্ছে গাছ। গত শুক্রবার এখানকার ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক প্রসেনজিৎ কুণ্ডু এলাকায় যান। অভিযোগ খতিয়ে দেখেন। কবে গাছ কাটা বন্ধ হয়, সে দিকে তাকিয়ে পরিবেশপ্রেমীরা।
ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনী এলাকার বেশ কয়েক বিঘা জমির উপরে পক্ষিনিবাস গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা চলছিল। কিন্তু সেটি আর বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বছরের বাকি সময়ের পাশাপাশি শীতের মরসুমে এখানকার জলাশয়ের মাঝে দেখা মেলে শীতের অতিথিদের। রুডি শেল্ডাক, লেসার হুইসলিং, পোচার্ড, মারগেঞ্জার, টাফটেড ডাক, পার্পেল হেরন–সহ নানা প্রজাতির পাখি বিচরণ করতে দেখা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জাঁকিয়ে শীত পড়েছে জলপাইগুড়িতে। তারই সঙ্গে এসে পড়েছে অতিথিরা।
পাশেই রয়েছে রেলের অফিস। আর সেই দপ্তরের গাঁ ঘেষে থাকা বাঁধের প্রান্তজুড়ে রয়েছে অসংখ্য গাছ। দিনে–দুপুরে পাখিদের যেখানে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। শান্ত বিকেলে গাছের উপরেই বসে থাকতে দেখা যায় অগণিত পাখিকে। সেই বাঁধের পাশে সারিবদ্ধ ভাবে থাকা পিঠালি–সহ নানা প্রজাতির গাছ কেটে সাফ করে দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
গাছ কেটে, গুঁড়ি টুকরো করে কেটে গাড়িতে চাপিয়ে প্রকাশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেউ যেন দেখার নেই! অবাধে গাছ কাটার এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যে। ডুয়ার্সের পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদার বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা কল্পনাতীত। পরিযায়ীদের বিচরণভূমি থেকে এ ভাবে অবাধে গাছ কাটা অবিলম্বে বন্ধের প্রয়োজন। যে এলাকায় গাছ কাটার কাজ চলছে, তার কয়েক হাত দূরেই রয়েছে বন দপ্তরের তিস্তা চেকপোস্ট। সেই চেকপোস্টের হাতের নাগালে থাকা এলাকাজুড়ে চলছে অবাধে গাছ কাটা। পিঠালি, ময়না–সহ নানা প্রজাতির গাছ এই এলাকায় রয়েছে। বন দপ্তরের নজরদারির দাবি তোলা হয়েছে অনেকদিন ধরে।’
বন দপ্তর কী করছে?
জলপাইগুড়ি বন বিভাগের এমপিপি রেঞ্জ তথা তিস্তা চেকপোস্টের দায়িত্ব প্রাপ্ত রেঞ্জার দর্জি শেরপার বক্তব্য, ‘সরকারি জমি থেকে গাছ কাটা হলে ওই দপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। তার পর আমরা বিষয়টি দেখতে পারি।’ ময়নাগুড়ি ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক প্রসেনজিৎ কুণ্ডুর দাবি, সবে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। বলেন, ‘যদি সরকারি জমি থেকে বিনা অনুমতিতে গাছ কাটা হয়, তবে তা অন্যায়। আমরা খতিয়ে দেখছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ দোমহনী ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে এই এলাকা। প্রধান শুক্লা রায় বর্মন জানেনই না যে গাছ কাটা হচ্ছে! বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’