• মাধ্যমিকের আগে পর্ষদের টেস্ট পেপার পেতে কেন এত দেরি হয়? জানা গেল কারণ
    হিন্দুস্তান টাইমস | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে ৩০ নভেম্বর। রেজাল্টও জানিয়ে দিয়েছে টিচাররা। এবার মাধ্যমিকের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার পালা। কিন্তু মনখারাপ করে বসে আছে প্রিয়া। প্রিয়া মাহাতো। ঝাড়গ্রামের একটি স্কুলের পড়ুয়া প্রিয়া ২০২৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে‌। কিন্তু প্রস্তুতি নেবে কীভাবে, সেটাই তাঁর কাছে বড় প্রশ্ন। কারণ স্কুল থেকে বলেছিল টেস্ট হয়ে গেলে কিছুদিনেই টেস্ট পেপার দেওয়া হবে‌‌। মাঝে  খোঁজ নিয়ে জেনেছিল, ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে টেস্ট পেপার চলে আসবে। কিন্তু ১৬ তারিখ পার। টিচাররাও কিছু বলতে পারছে না। বাবা দিনমজুর, মা লোকের বাড়ি কাজ করেন। কষ্ট করে টাকা জমিয়ে কিছু বই কিনতে পেরেছে এই বছর। কিন্তু টেস্ট পেপার জোগাড় হল না এখনও। এমন অবস্থা শুধু প্রিয়ার নয়, প্রিয়ার মতো আরও হাজার হাজার গরিব পড়ুয়ার। এই বছর তাঁরা মাধ্যমিক দেবে। কিন্তু প্র্যাক্টিসের জন্য বিনামূল্যের টেস্ট পেপার পায়নি এখনও। 

    চলতি বছর মাধ্যমিকের আগে টেস্ট পেপার পেতে যথেষ্ট দেরি হয়েছিল। মাধ্যমিক শুরু হয় ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। বেশ কিছু স্কুলে টেস্ট পেপার পৌঁছায় জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। স্বাভাবিকভাবে সেই টেস্ট পেপার পড়ুয়ারা সংগ্রহ করতেও আসেনি। প্র্য়াক্টিস করা তো অনেক দূরের কথা। ঠিক কী কারণে এত দেরিতে টেস্ট পেপার পৌঁছাচ্ছে স্কুলে? কেনই বা পড়ুয়ারা সঠিক সময়ে সরকারের ফ্রি টেস্ট পেপার হাতে পাচ্ছে না? কোথায় গাফিলতি হচ্ছে তা খোঁজ নিল HT বাংলা। 

    পশিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার কথায়, ‘আমরা তো মডেল টেস্ট পেপার তৈরি করি না। বিভিন্ন স্কুলে টেস্ট শেষ হলে তাদের থেকে পেপার সংগ্রহ করে ছাপাতে দেওয়া হয়। এই বছর বেশিরভাগ স্কুলে টেস্ট শেষ হয়েছে ৩০ নভেম্বর। ইতিমধ্যে টেস্ট পেপার সংগ্রহের কাজ শেষ করে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়ে  গিয়েছে। খুব শিগগিরই পৌঁছে যাবে স্কুলে স্কুলে।’ কবের মধ্যে পৌঁছাবে, সে বিষয়ে কিছু জাননো হয়েছে স্কুলগুলিকে? ওই শীর্ষস্থানীয় কর্তার কথায়, ‘স্কুলগুলিতে নোটিস যাচ্ছে, যাবে।’ এই কথার ভিত্তিতেই ফের শুরু খোঁজ।

    কথা হচ্ছিল বাদকুল্লা ইউনাইটেড অ্যাকাডেমি স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রতীক গরাইয়ের । গোবরডাঙা খাঁটুরা গার্লসের পড়ুয়া নবনীতা বর্মন HT বাংলাকে জানাল, ‘তাদের স্কুল থেকে এখনও কিছু জানায়নি। যতদূর শুনেছি, আশেপাশের স্কুল যেমন প্রীতিলতা গার্লস, প্রীতিলতা বয়েজ, খাঁটুরা বয়েজেও কিছু এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি।’

    পড়ুয়ারা যে শুধু অন্ধকারে তারিখ হাতড়াচ্ছে, তা নয়। তারিখ হাতড়াচ্ছেন শিক্ষকরাও। উত্তর চব্বিশ পরগনার বিরাটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল HT বাংলা। তিনি জানালেন ‘গত বছর বেশ দেরি করে এসেছিল টেস্ট পেপার। এই বছর এখনও পর্যন্ত কোনও খবর পাইনি।’ অন্যদিকে কলকাতার এক নামী স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন, ‘আমাদের পড়ুয়ারাও পর্ষদের টেস্ট পেপারের জন্য অপেক্ষা করে। পর্ষদের তরফে তো এখনও কিছুই জানা যায়নি।’

    পশিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ওই কর্তা HT বাংলাকে জানালেন টেস্ট পেপার তৈরির গোটা প্রক্রিয়া। বললেন, ‘প্রায় ১০ লাখের বেশি পড়ুয়ার জন্য টেস্ট পেপার ছাপা হয়। একটি প্রেসেই কাজ চলে। সেখান থেকে ছাপা, বাঁধাই হওয়ার পর জেলায় জেলায় সেটি পৌঁছে যায়।’ ওই কর্তার কথায়, জেলায় জেলায় সার্কুলেশনের সময়ই দেরি হয়। ‘ডিআই অফিসে সারা বছর যথেষ্ট ব্যস্ততা থাকে। তার মধ্যে ওরা বিলি করার দায়িত্ব নেয়। সব স্কুলকেই ডিআই অফিস থেকে টেস্ট পেপার সংগ্রহ করতে হয়। সেখানে স্কুলের সঙ্গে তারিখ না মিললে দেরি হবেই।’

    এ কথা অবশ্য মানতে নারাজ শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘ডিআই অফিস থেকে একটাই তারিখ দেওয়া হয়। আর নিয়ম হল স্কুলকে সেই তারিখে গিয়েই টেস্ট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। এখানে স্কুলের সঙ্গে ডিআই অফিসের তারিখ ম্যাচ করার কোনও জায়গা নেই।’ অর্থাৎ পর্ষদের দাবি অযৌক্তিক বলেই বুঝিয়ে দিলেন কিংকরবাবু। তবে এর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু প্রশ্নও তুললেন HT বাংলা মারফত।

    সঠিক সময়ে টেস্ট পেপার বিলি না হলে অনেক পড়ুয়াই স্কুলে গিয়ে আর সংগ্রহ করে না। ফলে স্কুলেই পড়ে থাকে গাদা গাদা টেস্ট পেপার। কিংকরবাবুর কথায়, ‘টেস্ট পেপার ছাপাতে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বড় অঙ্ক ব্যয় করে। ১০ লাখ পডুয়াদের জন্য ১০০ টাকার টেস্ট পেপার ছাপাতে ও বিলি করতে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা খরচ হয়েই যায়। তারপর যদি স্কুলে স্কুলে টেস্ট পেপার পড়েই থাকে, তাহলে লাভ কী হল। এত অর্থ অপচয়ের কী অর্থ?’

    জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। টেস্ট পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি দিন তাই ভীষণ মূল্যবান। কিন্তু টেস্ট পেপার হাতে পেতে পেতেই যদি এত দেরি হয়, তাহলে আসল উদ্দেশ্যই অধরা থেকে যায়। কিংকরবাবুর প্রশ্ন,' ‘বিনামূল্যে পাওয়া টেস্ট পেপার গরিব পড়ুয়াদের কাছে ভীষণ মূল্যবান। কিন্তু সঠিক সময়ে না পেলে প্র্যাকটিসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, প্রস্তুতির ঘাটতিও থাকছে।টেস্ট পেপার অনেকেই শেষ করতে পারছেন না দেরির জন্য। গরিব পড়ুয়ারা কি আদৌ লাভবান হচ্ছে।’

    পর্ষদের ওই শীর্ষ কর্তা জানিয়েছিলেন, ‘টেস্ট পেপার তৈরির গোটা প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। কিন্তু তার পরেও চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে দ্রুততার সঙ্গে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।’ এদিকে বাজারে আরও অনেক টেস্ট পেপার প্রকাশিত হয়। সেগুলি বিভিন্ন স্কুলের টেস্টের প্রশ্নপত্র নিয়েই প্রকাশিত হয়। এখানেই প্রশ্ন তুললেন কিংকরবাবু। তাঁর কথায়, ‘বেসরকারি টেস্ট পেপার কীভাবে এত তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হচ্ছে? পৌঁছে যাচ্ছে জেলায় জেলায় পড়ুয়াদের কাছে? একটা বেসরকারি সংস্থার তুলনায় সরকারি দফতরের হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতা ঠিকভাবে কাজে লাগালেই সঠিক সময়ে টেস্ট পেপার সব পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’

    এই প্রতিবেদন লেখার দিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর মালদার দু-একটি স্কুলে খোঁজ নিয়েছিল HT বাংলা। মালদা জেলা স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রোশন সিকদারের । ‘গত বছরের টেস্ট পেপার শেষ হয়ে গিয়েছে আগেই। সহায়িকা বইয়ের প্রশ্নোত্তরও সলভ করে ফেলেছি। এবার পর্ষদের টেস্ট পেপারটা হাতে পেলেই শান্তি। কবে দেবে বলেনি কিছু। এখন অপেক্ষাই ভরসা!’
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)