• বাড়িতে ঢুকে সাত মণ ধান সাবাড়, শুঁড়ে করে এক বস্তা ধান নিয়ে জঙ্গলে ফিরল হাতি ...
    আজকাল | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • অতীশ সেন, ডুয়ার্স: সাত মণ ধান সাবাড় করেই ক্ষান্ত হল না, যাওয়ার পথে শুঁড়ে করে ধানের বস্তা নিয়ে জঙ্গলে ফিরল হাতি। সেখানে দাঁড়িয়ে আয়েশ করে সাবাড় করল বয়ে আনা সেই ধান। কোনও পোষা বা কুনকি হাতির এমন কাণ্ড নয়, পুরোপুরি বুনো একটি হাতি এমনই ঘটনা ঘটাল মেটেলিতে। 

    সোমবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ জলপাইগুড়ি জেলার মেটেলি ব্লকের উত্তর অঞ্চলপাড়ার নমিতা রায় নামের এক বাসিন্দার বাড়িতে খাবারের লোভে হানা দেয় একটি বুনো হাতি। শীতের রাতে ওই বাড়ির সকলেই তখন ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। হঠাৎ ঘরের টিনের বেড়া হুড়মুড়িয়ে ভাঙার আওয়াজে তাঁরা উঠে দেখেন, তাঁদের বাড়িতে হানা দিয়েছে একটি হাতি। বাড়ির সকলে প্রাণ হাতে করে কোনও রকমে বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচেন। এর পরই হাতিটি নিশ্চিন্তে সেই বাড়িতে মজুত ধান খাওয়াতে মন দেয়। 

    গ্রামে হাতির হানার বিষয়টি বুঝতে পেরে, কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা চিৎকার করা শুরু করলে হাতিটি বিরক্ত হয়ে আবার জঙ্গলের পথ ধরে। তবে যাওয়ার সময় সকলকে অবাক করে শুঁড়ে পেচিয়ে একটি ধানের বস্তা নিয়ে সে দুলকি চালে রওনা দেয়। জঙ্গলে ফিরে সেই খাবারও সাবাড় করে হাতিটি। ঘটনায় ওই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত ও বিস্মিত। গ্রামে হাতির হানা রুখতে তাঁরা রাতে বনকর্মীদের টহলদারীর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁদের সার্চ লাইট বিতরণ করার দাবিও স্থানীয়রা বনকর্মীদের জানান। ঘটনায় বনদপ্তরের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।  

    অরণ্যের আয়তন হ্রাস, জঙ্গলে খাদ্যাভাব, জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বসতি স্থাপন ও চাষাবাদের জেরে বদলাচ্ছে ডুয়ার্সের হাতিদের খাদ্যাভ্যাস। ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় হাতির দলের রান্নাঘর, ভাঁড়ার ঘর এবং জঙ্গল লাগোয়া স্কুলগুলিতে হানা দিয়ে সেখানে রাখা খাবার, রেশন ও মিড-ডে-মিলের চাল উদরসাৎ করা কিংবা গালামালের দোকান ভেঙে মুখরোচক খাবার খাওয়ার ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

    ইদানিং হাতির দলের একই রাতে একাধিক ব্যক্তির রান্নাঘরে হানা দিয়ে আনাজপাতি ও লবণ খাবার ঘটনা ঘটতেও দেখা যাচ্ছে। পরিবেশপ্রেমীরা হাতির খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং তাদের দেহে প্রাকৃতিক খনিজ লবণের ঘাটতিকেই এর কারণ হিসেবে দেখছেন। জঙ্গলে যে সমস্ত খাবার প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, তার তুলনায় অধিক পুষ্টিকর ও ক্যালোরি যুক্ত খাবার সহজে লাভ করার লোভেই হাতির দল এখন লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। মুদি দোকান, রেশানের গোডাউন এবং বাড়ির ভাঁড়ারঘর'কে তারা টার্গেট বানাচ্ছে। 

    হাতির দলের আরেক পছন্দের টার্গেট এখন বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জুনিয়র হাই স্কুল। সাধারণত এই স্কুল গুলির পরিকাঠামো খুব একটা ভাল নয়। ইটের দেওয়াল ও টিনের চালের এই স্কুলগুলি ভেঙে ভেতরে ঢুকতে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না। এছাড়াও স্কুলে হানা দিলে গৃহস্থের বাড়ির মতো প্রতিরোধের সম্মুখীনও তাদের কম হতে হয়। মিড-ডে-মিলের জন্য প্রতিটি স্কুলেই মজুত রাখা হয় চাল, ডাল ও আনাজপাতি। সহজেই হাতির দল তা খেয়ে জঙ্গলে ফিরছে।

    হাতির হানা ঠেকাতে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতির পছন্দের ফসল চাষের বদলে বিকল্প চাষ, বাড়িতে বেশি পরিমান আনাজ মজুত না করা, আনাজ মজুত করতে হলে বাড়িতে কিম্বা স্কুলের ভেতরেই গর্ত করে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বার নির্মাণ করে সেখানে চাল-ডাল মজুত, গ্রামে হাতি ঢোকার বিষয়টি জানতে অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপনের মতোও বিভিন্ন পদক্ষেপ সহ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান অনেকাংশেই করা সম্ভব বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)