‘পথচলা ও বাজনায় ইনস্পায়ার করেছেন’, বললেন বিক্রম ঘোষ
এই সময় | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
বিক্রম ঘোষ
তালের জগৎ তার সোম হারাল। সোম হলো যে কোনও সাইকেলের প্রথম বিট, বলা ভালো যে কোনও তালের ভিত্তি। আমাদের সকলের জীবনেই উস্তাদ জ়াকির হুসেন ছিলেন পিভট-এর (ভিত্তি) মতো। যাঁকে ঘিরে ঘুরত তালের ব্রহ্মাণ্ড। ওঁর চলে যাওয়াটা অকল্পনীয়। ৭৩ বছর চলে যাওয়ার সময় নয়। কত কাজ বাকি, কত কী করার ছিল। ওঁর মতো একজন মানুষের চলে যাওয়া অনেক বড় ক্ষতি। আমার কাছে বড় দাদার থেকে কম কিছু ছিলেন না।
ছোটবেলায় একই বাড়িতে থাকতাম আমরা। ইউএস-এ সান রাফায়েল শহরে। ওই বাড়ির উপরের তলায় বাবা-মার সঙ্গে আমি থাকতাম। আর নীচের তলায় পণ্ডিত চিত্রেশ দাসের (কথক নৃত্যশিল্পী) সঙ্গে রুম শেয়ার করে থাকতেন জ়াকির হুসেন। ওঁর তখন ১৮-১৯ বছর বয়স। আমার যখন ৩-৪ বছর বয়স, সেই সময়ে মাঝেমধ্যে দেখাশোনার জন্য বাবা-মা ওঁর কাছে আমাকে রেখে যেতেন।
সেই থেকে শুরু। সারা জীবন ধরে সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আমাকে উৎসাহ-উপদেশ দিয়েছেন, এগিয়ে দিয়েছেন, রাস্তা দেখিয়েছেন। সেটা ব্যক্তিগত জীবন হোক বা পেশাগত কেরিয়ারে। বরাবরই দারুণ এক স্নেহের চোখে দেখতেন। আমার কাছে বরাবরই ওঁর জন্য আলাদা একটা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা রয়েছে। দেখা হলেই একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরতাম। গাল টিপে দিয়ে, চুমু খেয়ে, মাথার চুলটা নাড়িয়ে দিয়ে আদর করতেন। বলতেন ‘এই সে দিন বেবিসিট করতাম, আর আজ দেখ কত বড় হয়ে গেছিস’।
গত বছর ঠিক এই সময়ে যখন গোয়ায় সেরেন্ডিপিটিতে কিউরেশনের সময়ে ঠিক ১৫ ডিসেম্বরই দেখা হয়েছিল। আমার ছোট ছেলেকে আদর করে আমার সঙ্গে চেনা মেজাজে হাসি-ঠাট্টা করলেন। কত আড্ডা দিলাম। মনে হচ্ছে এই সে দিনের কথা।
উস্তাদ জ়াকির হুসেন অনেক ভাবে ইনস্পায়ার করেছেন আমাকে। সে জীবনে পথচলার রাস্তা হোক বা বাজনার রাস্তা। শুধু ভারতবর্ষ কেন, পৃথিবীর বুকে এমন একজন আর্টিস্ট কল্পনা করা যায় না।
ওঁর চলে যাওয়ায় যে ক্ষতি সঙ্গীতজগতের হলো তা অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়। আরও অনেকটা সময় থাকা উচিত ছিল ওঁর। মারাত্মক রকমের ডিভাসটেডেট লাগছে। কাজটা করতে হবে তাই করছি। খুবই যান্ত্রিক ভাবে। যেন জম্বির মতোই। তবে আমার মন, হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছি না উস্তাদ জ়াকির হুসেন আর নেই। জ়াকিরভাই, জ়াকিরজি বলে আর কাউকে কোনও দিন ডাকব না, কল্পনাই করতে পারছি না।