• কনসার্ট শুরু হলে ভাবতাম, ভগবান আছেন ভাবনা কী! ওস্তাদ জ়াকির হুসেনের স্মৃতিচারণায় পণ্ডিত রাকেশ চৌরাশিয়া
    এই সময় | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • পণ্ডিত রাকেশ চৌরাশিয়া

    রবিবার রাতে যখন ঝড়ের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল, তখনও বিশ্বাস করতে পারিনি জ়াকিরজি নেই। রাতভর তীব্র অশান্তিতে কেটেছে। আমেরিকায় জ়াকিরজির পরিবারের প্রায় সবাইকে ফোন করেছি। বেজে গিয়েছে। তখনই মনটা কু–গাইতে শুরু করেছিল। রবিবার সন্ধ্যায় টোনি বৌদি মেসেজ করে জানিয়েছিলেন, জ়াকিরজি সঙ্কটে, ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। আশা ছিল, সব ঝড় কাটিয়ে তিনি ফিরে আসবেন আমার কাছে মাথায় আশীর্বাদের হাত হয়ে। কিন্তু, হলো না।

    আমি আরও একবার বড় প্রাণের মানুষকে হারালাম। সমগ্র মিউজ়িক্যাল ওয়ার্ল্ডের কাছে সবচেয়ে বড় ক্ষতি। ভারতবর্ষ হোক বা বিদেশ — মার্গ সঙ্গীতের অন্যতম মুখ ছিলেন জ়াকির হুসেন। যেটা অর্জন করা সত্যিই খুব শক্ত। কারণ অনেক আর্টিস্টেরই এখানে নাম হয়, বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পান না। সে দিক থেকে জ়াকিরজি সত্যিই অন্য মানের।

    এই বছর আমরা ‘পাস্তো’ ও ‘অ্যাজ় উই স্পিক’–এর ‘বেস্ট গ্লোবাল মিউজ়িক পারফরম্যান্স’ ও বেস্ট কনটেম্পোরারি ইনস্ট্রুমেন্টাল অ্যালবাম’–এর জন্য গ্র্যামি পেয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই এটা জ়াকিরজির জন্য পাওয়া। কারণ বরাবরই উনি বলে গিয়েছেন, নিজের সেরাটা দাও। আর সামলানোর জন্য তো আমি আছিই। এটা যে একজন পারফর্মারের জন্য কত বড় আশীর্বাদ, সেটা বলে বোঝানো সত্যিই শক্ত।

    আমি সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন, যে এই সুযোগটা পেয়েছি। মনে আছে এই দুই অ্যালবামের মহড়ার সময়ে বারবারই জ়াকিরজি জোর দিতেন, ফ্লুটটা কেমন যাচ্ছে, কেমন করে তবলাটা তার সঙ্গে একাত্ম হতে পারে, তার দিকে। এবং তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম, কী অবলীলায় জ়াকিরজি, একটার সঙ্গে একটা সুর জুড়ে মায়া লাগাচ্ছেন। সেই প্ল্যানিং না দেখলে বোঝানো সত্যিই খুব শক্ত।

    আমাদের প্রজন্মকে জায়গা দেওয়ার জন্যও জ়াকিরজি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শুধু আমাদেরই নয়, আমাদের পরের প্রজন্মকেও জায়গা দিয়েছেন জ়াকিরজি। ওঁর নাম শুনলেই কনসার্ট হাউজ়ফুল হয়ে যেত। ওঁকে নিয়ে স্টেজে বসা, এক অন্য রকমের অভিজ্ঞতা। স্টেজে জ়াকিরজিই ছিলেন আমাদের দেশ। আমাদের দেশের মার্গ সঙ্গীত। সেই দেবতার হাতই আমার মাথার উপর থেকে সরে গেল। যে কোনও দিকপালের সঙ্গে বাজানোর জন্য কেমিস্ট্রিতে মিল হওয়া খুবই জরুরি। একটা অদ্ভুত বাধা তৈরি হয় অনেকের সঙ্গে বাজানোর সময়েই। সেই বাধাটা স্টেজে বসে তবলা সেটিং করতে করতেই মিটিয়ে ফেলতেন জ়াকিরজি। তাই যখন বাঁশিতে ফুঁ দিতাম, চোখ বন্ধ করে একটাই কথা বলতাম, সামনে ভগবান আছেন, সব কিছু বুঝে নেবেন। আমার ভগবান হারিয়ে গেলেন।
  • Link to this news (এই সময়)