• তেষ্টা মেটাতে চামুর্চির ভরসা ভুটানের ঝরনার জল
    এই সময় | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি

    স্বাধীনতার পরে কেটে গিয়েছে এতগুলো বছর! অথচ, আজও জলকষ্ট মেটেনি চামুর্চির বহু মানুষের। তেষ্টা মেটাতে ভরসা সেই ভুটান থেকে আসা ঝরনার জল। বছর তিনেক আগে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। এলাকায় রিজার্ভার এবং পাম্প হাউস তৈরির কাজও শুরু হয়। অভিযোগ, মাঝপথে কাজ বন্ধ করে চলে যান ঠিকাদার। এখন ফের কাজ শুরু হয়েছে। তবে সেই কাজও চলছে ধীর গতিতে।

    জলপাইগুড়ি জেলার একেবারে ভুটান সীমান্ত লাগোয়া জনপদ চামুর্চি। সেখানে এখনও পৌঁছয়নি পরিস্রুত পানীয় জল। ডিপা লাইন, সেরা লাইন, তেলিফাটক, চেকপোস্ট এলাকায় সেই সমস্যাটা আরও বেশি। এমনকী এসএসবি ক্যাম্পকেও ভরসা করতে হয় ভুটানের জলের উপরেই।

    চামুর্চি এলাকায় প্রাচীরের ও-পারে ভুটান, এ-পারে ভারত। প্রাচীরের নীচ দিয়ে রয়েছে পাইপ। ভুটান থেকে ঝরনার জল আসে সেই পাইপের মাধ্যমে। নিত্যদিন সীমান্তের হাজার পাঁচেকেরও বেশি মানুষ সেই জলের উপরেই ভরসা করেন। তবে সমস্যা বেড়ে যায় বর্ষাকালে। বর্ষায় বহু জায়গায় পাইপ ফেটে যায়। তখন সেই জলের সঙ্গে নোংরাও মিশে যায়।

    চামুর্চির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বর্ষায় অনেক সময়ে পাইপের জল পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। অনেককেই তখন জল কিনে খেতে হয় কিংবা পাঁচ-সাত কিলোমিটার দূরের কোনও এলাকা থেকে জল সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘সাধারণ মানুষ সরকারি সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পাচ্ছেন না বলে সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক সম্মেলনেও পানীয় জল সরবরাহের ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তারপরেও আমাদের অবস্থার কোনও বদল হয়নি।’

    চামুর্চির বাসিন্দা বিধান সরকার বলেন, ‘বহুদিন থেকে ভুটানের জল খেয়েই আমরা বেঁচেবর্তে আছি। তবে এই জলটাও খুব একটা পরিষ্কার নয়। জলে ডলোমাইট মিশে থাকে। কিন্তু আমরা তো নিরুপায়। সব জেনেও সেই জলই খেতে হয়। বর্ষায় জলের পাইপ ফেটে গিয়ে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। শুনেছি, রাজ্য সরকার জলের রিজার্ভার তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু সেই কাজও চলছে খুব ঢিমেতালে।’ বিধানের সংযোজন, ‘সীমান্ত এলাকা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু তারা কখনও আমাদের কথা ভাবেনি। বরাবরই তারা উদাসীন থেকেছে। সবচেয়ে বড় কথা, এসএসবি ক্যাম্পের জওয়ানদেরও ভুটানের ঝরনার জলের উপরেই ভরসা করতে হয়।’

    স্থানীয় ব্যবসায়ী আকিমুল হক বলেন, ‘শুধু ভুটান গেট বাজার এলাকাই নয়, বাগানের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং এসএসবি ক্যাম্পেও ভুটানের ঝরনার জল যায়। বর্ষায় পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন সেই জলটুকুও মেলে না।’ চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তপন রায় বলেন, ‘কিছু এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ এলাকায় অন্য রিজার্ভার থেকে জল যাচ্ছে। ভুটান সীমান্তে সরকারি উদ্যোগে জলের রিজার্ভার ও পাম্প হাউস তৈরি করা হচ্ছে। সেটা তৈরি হয়ে গেলে জলকষ্ট পুরোপুরি মিটে যাবে। এটা তৈরি হতে দেরি হচ্ছে কারণ, মাঝপথে একবার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আশা করছি, দ্রুত ওই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন জলের সমস্যাও আর থাকবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)