• ট্রেনের টাইম মেনে ক্লাস! শিক্ষকদের আটকাতে গেট বন্ধের হুমকি পড়ুয়াদের
    এই সময় | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, বেলদা: ট্রেন ধরার তাড়া। তাই ক্লাস না–করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে যান শিক্ষকরা! তিনটি ট্রেনের উপরে নির্ভর করছে ক্লাসরুম গমগম করবে নাকি ফাঁকা পড়ে থাকবে! কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না–করে এ ভাবেই নাকি চলছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা কলেজের পড়াশোনা। মঙ্গলবার ছাত্রছাত্রীরা সাফ জানান, শিক্ষকদের আটকে রাখতে গেট বন্ধ রাখবেন তাঁরা।

    কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলদা কলেজের শিক্ষকদের একাংশ কলকাতা বা দূরের অন্য কোনও এলাকা থেকে যাতায়াত করেন। কলেজে আসার জন্য তাঁরা বেছে নেন ধৌলি এক্সপ্রেস। যা বেলদা স্টেশনে পৌঁছয় সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ, কখনও ১২টাতেও। তারপর কলেজে পৌঁছে হাজিরা খাতায় সই। এক–দু’টো ক্লাস করতে না–করতেই দেড়টা বেজে যায়। এ দিকে, ২.২৪ মিনিটে খড়্গপুর যাওয়ার ট্রেন ছাড়ে।

    ফলে দু’টোর আগেই বেরিয়ে পড়তে হয় কলেজ থেকে। এর পরে আবার ৪.১৯ মিনিটে রয়েছে ধৌলি এক্সপ্রেস। সেটা ধরতে গেলেও সাড়ে তিনটের মধ্যে কলেজ থেকে বেরোতে হয়। ফলে শিক্ষকদের একাংশ বিকেল চারটে পর্যন্ত কলেজে থাকেন না। বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স চালু করেও কাজ হয়নি। হাজিরা খাতাকেই পরিচালন সমিতির বৈঠকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

    এ হাওয়া যে বড্ড খারাপ! একপক্ষের যদি নিত্য এমন সুবিধে মেলে, অন্য পক্ষ মানবে কেন? সামনে বাড়ি বলে বা বাড়ি ভাড়া করে বেলদায় রয়েছে‌ন বলে, তাঁরাই শুধু খেটে যাবেন! ফাঁকির হাওয়া গায়ে সুড়সুড়ি দেবে না, তা হয় নাকি? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজেরই এক শিক্ষক জানালেন, একাংশ শিক্ষকের ট্রেন ধরার তাড়া দেখে অন্যরা আগে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতেন। মুচকি হাসতেন। ধীরে ধীরে দেখা গেল, তাঁরাও কলেজে এসে এক–দু’টো ক্লাস

    করে বা না–করে বাড়ি ফিরে গেলেন বিশ্রাম নিতে। ফের সাড়ে তিনটে নাগাদ কলেজে এসে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন।

    এরই বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সরব হন পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। অধ্যক্ষকে অভিভাবকরা জানান, এমন চললে এর পরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। স্থানীয় অভিভাবকরা তখন পাশে থাকবেন না। আর পড়ুয়ারা সাফ জানান,

    শিক্ষকরা যাতে বেরোতে না–পারেন, তাই কলেজের মেন গেট বিকেল চারটে পর্যন্ত বন্ধ করে রাখবেন তাঁরাই।

    স্নাতকোত্তর ইংরেজি প্রথম বর্ষের ছাত্র দিগন্ত জানা, পাশ কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সঞ্জয় মাইতিরা বলেন, ‘বেশ কয়েক জন শিক্ষক সকাল সাড়ে ১১টায় ঢোকেন। আবার দুপুর ২ টোর মধ্যে বেরিয়ে যান। আমরা অধ্যক্ষকে জানিয়েছি, যদি তিনি এই সমস্যার সমাধান না করতে পারেন, তা হলে আমরাই গেট আটকে শিক্ষকদের চারটে পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা করব।’

    কিছু শিক্ষক যে এমন করেন, তা স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ চন্দ্রশেখর হাজরা বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আটকাতে চেষ্টা করেছি। ফলে এই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে এখনও সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা আনতে পারিনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।’

    কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা নারায়ণগড়ের তৃণমূল বিধায়ক সূর্য অট্ট বলেন, ‘শিক্ষকদের দেরিতে আসা ও ক্লাস না–করে দ্রুত কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ক্রমাগত ঘটে চলেছে। ফলে কলেজের পরিবেশ ‌নষ্ট হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করব।’

  • Link to this news (এই সময়)