• 'এক দেশ এক নির্বাচন' কী লাভ বা ক্ষতি? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in
    আজ তক | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • মঙ্গলবার লোকসভা পেশ করা হয়েছে ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বা এক দেশ এক নির্বাচন বিল। ভোটাভোটুর পরে এই বিলকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এক দেশ এক ভোট সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্ট অনুমোদিত হয়েছিল। এক দেশ এক ভোট পদ্ধতির বিরোধিতায় সরব কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থীও বলে সরব বিরোধী শিবির। যদিও বিজেপির দাবি, এক দেশ এক নির্বাচন কোনও নতুন ধারণা নয়। ১৯৫২ সালে প্রথমবার দেশে একইসঙ্গে সমস্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে আটটি রাজ্যের বিধানসভা ভেঙে আবারও একসঙ্গে ভোট করা হয়েছিল। এর পরের নির্বাচনেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল।

    সরকার বলছে, 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' সরকারের কাজ সহজ করবে। দেশে ঘন ঘন নির্বাচনের কারণে কাজ আটকে যায়। কারণ নির্বাচন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আচরণবিধি কার্যকর হয়ে যায়। যার কারণে প্রকল্প বিলম্বিত হচ্ছে এবং উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে হওয়ার কারণে সরকার নীতিনির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগ দিতে পারবে। শুধু তাই নয়, একবার নির্বাচন করলে খরচ কমবে, কম সম্পদও লাগবে বলে দাবি করা হচ্ছে। যে টাকা সাশ্রয় হবে তা দেশের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।

    ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশনের পক্ষে মত দিয়েছন বিজেপি নেতা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ। তিনি বলেন, 'ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন করলে নিশ্চয় লাভ হবে। তার কতগুলো কারণ আছে। ওয়ান নেশন-ওয়ান স্টেট বেশ কিছু দেশে রয়েছে, আমেরিকাতে রয়েছে। ওখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে অন্য ভোটও হয়ে যায়। তাতে কোনও সমস্যা হয় না। ভারতে ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন চালু হলে প্রথমত নির্বাচনের খরচ কমবে। অনেক টাকা বাঁচবে। একসঙ্গে নির্বাচন হলে একই খরচে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাবে কম খরচে। এছাডা়ও লোকসভা ও রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচনের কারণে আদর্শ আচরণবিধি লাগু হয়। সেই সময় উন্নয়নমূলক কাজ হয় না। সেই সমস্যা মিটবে। এছাড়াও এক ধরনের স্টেবিলিটি আসতে শুরু করবে রাজনীতিতে। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশলতা। শক্তিশালী সরকার তৈরি করার জন্য মানুষের মধ্যে একটা চেতনা আসবে। তাই এখানে লাভের অঙ্ক ষোলোআনা।'

    মাঝপথে কোনও রাজ্যে সরকার পড়ে গেলে তো আবার ভোট করাতে হবে, তাতে কি সমস্যা তৈরি হবে? এই বিষয়ে তিনি বলেন,'সরকার পড়ে গেলেও সমস্যা তৈরি হবে না। যদি ধরে নিই ২ বছর পরে কোনও রাজ্যে সরকার পড়ে গেল, তাহলে বাকি ৩ বছর সরকার গড়ার জন্য নির্বাচন হবে। তিন বছর পরে আবার লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা ভোট হবে সেই রাজ্যে। রাজ্যসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম চালু আছে। এই মডেল লোকসভা ও বিধানসভার ক্ষেত্রে লাগু হলে কী অসুবিধা হবে?' একসঙ্গে অনেক রাজ্যে মাঝপথে সরকার বেড়ে গেলে আবার নির্বাচন করাতে তো খরচ হবে? জবাবে বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, 'সম্ভাবনা অনেক থাকে। সেটা দিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনা করা অসম্ভব। ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষ যদি দেখেন এতে লাভ হচ্ছে, তখন তাঁরাই এটার পক্ষে যাবেন।'

    তবে, এই বিষয়ে অন্য মত প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। তিনি বলেন,'ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে হতে পারে, ভারতের মতো বিরাট দেশে একটু অসুবিধা আছে।'

    বলা হচ্ছে, দেশে একযোগে নির্বাচন হলে সরকারি কোষাগারে বোঝা কম হবে। এতে সাশ্রয় হওয়া উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এক দেশ-এক নির্বাচন বাস্তবায়ন হলে দেশের জিডিপিও এক থেকে দেড় শতাংশ বাড়তে পারে। নির্বাচনী ব্যয়ের কথা বললে মুদ্রাস্ফীতি সূচকের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। বিগত বছরগুলিতে পরিষেবা এবং পণ্যের দাম বৃদ্ধির ভিত্তিতে ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে প্রায় ১০.৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের মতে, ১৯৫১ সালে মোট ১৭.৩২ কোটি জন ভোটার ছিলেন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে ৯১.২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। কমিশনের মতে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৯৮ কোটি ভোটারের নাম তালিকায় ছিল।

    মোদিীসরকার ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে। নির্বাচন কমিশনের মতে, এই নির্বাচন পরিচালনা করতে প্রায় ৩৮৭০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর আগে, ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে ১১১৪.৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচনী ব্যয় ২০০৯ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। একই সময়ে ২০১৯লোকসভা নির্বাচনের জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় ৬৬০০ কোটি টাকা।
  • Link to this news (আজ তক)