• ৬ কোটি খরচ হলেও ১৩ বছরে কাঁথিতে সরকারি আইটিআই কলেজ তৈরি হয়নি
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ হলেও ১৩বছরে তৈরি হল না কাঁথি-৩ ব্লকের সরকারি আইটিআই কলেজ। কলেজে যাওয়ার রাস্তা থেকে পানীয় জলের জন্য ওয়াটার রিজার্ভার, ভবনের ফাউন্ডেশন এবং পিলার তোলা হয়েছে। তারপর ২০১৩ সালে ঠিকাদার সংস্থা চলে গিয়েছে। গত ১১বছর ধরে বাজ পড়া তালগাছের মতো ওই পিলার দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঝোপঝাড়ে ঢেকেছে তিন একর জায়গা। দু’বার শিলান্যাসের পরও সরকারি আইটিআই কলেজের কাজ এতটুকু এগয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এনিয়ে কোথাও দরবার করেননি। অথচ, ওই এলাকায় এক তৃণমূল নেতার বেসরকারি আইটিআই কলেজ রমরমিয়ে চলছে। নিন্দুকেরা বলেন, এলাকায় বেসরকারি আইটিআই কলেজের কথা ভেবেই সরকারি ওই কলেজ আর গড়ে ওঠেনি।


    ২০১১ সালের ২৬জানুয়ারি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার কাঁথি-৩ ব্লকে আইটিআই, দেশপ্রাণ আইটিআই, দেশপ্রাণ ডিগ্রি কলেজ এবং কাঁথি-৩ জল প্রকল্পের একযোগে শিলান্যাস করেছিল। একমাত্র কাঁথি-৩ আইটিআই বাদে বাকি তিনটি প্রকল্প দিব্যি গড়ে উঠেছে। দেশপ্রাণ ডিগ্রি কলেজ থেকে দেশপ্রাণ ব্লকে আইটিআই এবং জলপ্রকল্প, সবকটির কাজ সময়মতো শেষ হয়। কিন্তু, দেশপ্রাণ ডিগ্রি কলেজ লাগোয়া কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠ মৌজায় তিন একর জমির উপর ওই সরকারি আইটিআই কলেজ গড়ে ওঠেনি। অথচ, এলাকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে ওই সরকারি আইটিআই কলেজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এজন্য মোট তিন একর জমি চিহ্নিত হয়। প্রস্তাবিত কলেজের পাশ দিয়ে পিচ রাস্তা তৈরি করা হয়। জলের কথা ভেবে ওয়াটার রিজার্ভার তৈরি হয়। আইটিআই কলেজের জন্য ফাউন্ডেশন থেকে পিলার তোলার কাজও হয়েছে। ২০১৩ সালে এজেন্সি কাজ ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকে ১০বছর একটি ইটও গাঁথা হয়নি। সারি সারি পিলার দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাতে লতানো গাছ জড়িয়ে উঠেছে। রাতবিরেতে সেখান থেকে ইট খুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে পুলিস টহল দেয়।


    একই এলাকায় এক তৃণমূল যুব নেতার প্রাইভেট আইটিআই দিব্যি চলছে। পরিকল্পনামতো সরকারি আইটিআই তৈরি হলে ছাত্র-যুবরা অনেক কম খরচে প্রশিক্ষণ নিতে পারতেন। ২০১৪ সাল নাগদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুরে একাধিক প্রজেক্টের শিলান্যাস করেছিলেন। সেই তালিকায় কাঁথি-৩ আইটিআই ছিল। কিন্তু, দু’দফায় শিলান্যাসের পরও ওই প্রকল্প বাস্তবের মুখ দেখেনি।বাম সরকারের কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ বলেন, আমি দেশপ্রাণ আইটিআই এবং কাঁথি-৩ আইটিআই নিয়ে ভীষণ আগ্রহী ছিলাম। ২০১১সালে ২৬জানুয়ারি একসঙ্গে চারটি প্রজেক্টের শিলান্যাস হয়। তিনটির কাজ সময়মতো শেষ হয়। কিন্তু, কাঁথি-৩ আইটিআইয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। প্রায় ছ’কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এনিয়ে এই এলাকার তৃণমূল বিধায়ক, মন্ত্রীদের অনেকবার বলেছি। কিন্তু, কেউ ওই প্রজেক্ট নিয়ে উৎসাহ দেখাননি। কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ বলেন, ওই আইটিআই অসম্পূর্ণ অবস্থায় দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে পড়ে রয়েছে। এজেন্সি কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে সব বন্ধ। প্রাইভেট আইটিআই কলেজের কর্ণধার তথা যুব তৃণমূল নেতা বলেন, সরকারি আইটিআই গড়ে না ওঠার পিছনে কী কারণ তা আমার জানা নেই। তবে এর সঙ্গে প্রাইভেট আইটিআইয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)