• দল বেঁধে তাণ্ডব হাতির, আলুখেতের দফারফা 
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: চাষিদের পাকা ধানে মই দিল বুনো হাতির দল। জয়পুরের যাদবনগরে ৫৩টি বুনো হাতি প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যজুড়ে আলু খেত তছনছ করে দিল। নষ্ট করল শিম, বরবটি সহ বিভিন্ন মরশুমি সব্জির খেতও। জয়পুরের আধকাটা বিটের অন্তর্গত আঙারিয়া, শালতোড়া, মাধবপুর, যাদবনগর, খড়িকাশুলি, বালিগুমা প্রভৃতি এলাকায় সব মিলিয়ে ১০০ বিঘারও বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। ঋণ নিয়ে চাষ করা দরিদ্র চাষিরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাঁরা অবিলম্বে হাতির পাল সরানোর দাবি তুলেছেন। 


    বনদপ্তরের বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত ডিভিশনের আধিকারিক রাজু সরকার বলেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের দিক থেকে আসা হাতির পাল দু’ দিন ধরে জয়পুরের আধকাটা বিট এলাকায় রয়ে গিয়েছে। ওই এলাকায় আলু সহ অন্যান্য  সব্জির ক্ষতি করেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। হাতির দলটিকে বনকর্মী ও এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের কর্মীরা সর্বক্ষণ নজরে রেখেছেন। তাঁরা চেষ্টা করছেন হাতিদের জঙ্গলের মধ্যেই আটকে রাখতে। কিন্তু এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যাওয়ার পথে চাষের জমি রয়েছে। সেখানেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিন হাতির দলটি বাঁকাদহ রেঞ্জের আস্থাশোলের জঙ্গল অবস্থান করছে। এলাকায় সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। 


    স্থানীয় জগন্নাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাজু দালাল বলেন, আমাদের এলাকায় বুনো হাতিতে আলু ও অন্যান্য সব্জির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। সব মিলিয়ে ১০০ বিঘারও বেশি জমিতে তাণ্ডব চালিয়েছে। এলাকা থেকে হাতিদের অন্যত্র সরানোর জন্য বনদপ্তরকে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দিষ্ট ফর্ম ফিল আপ করতে বলা হয়েছে। 


    স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান খান বলেন, ৩ হাজার টাকা বস্তা আলুবীজ কিনে লাগানো হয়েছে। তার উপর সার রয়েছে। এতটাকা খরচ করে আলু লাগিয়েছি। গাছ বেশ খানিকটা বড় হয়ে গিয়েছে। হাতির পাল রাত তিনটে নাগাদ আমাদের জমিতে নেমে পড়ে। পুরো জমিটি পায়ে মাড়িয়ে মই দেওয়ার মতো করে দিয়েছে। এখন লাভ তো দূরের কথা, ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। 


    স্থানীয় বাসিন্দা আসানুর দালাল বলেন, আমার ১ বিঘা জমিতে পোখরাজ আলু লাগিয়েছিলাম। গাছের গোড়ায় ছোট ছোট আলু ধরেও গিয়েছিল। ১ মাস পরেই তা বিক্রি করা যেত। কিন্তু হাতিতে মাড়িয়ে, গাছ উপড়ে খেয়ে শেষ করেছে। প্রচুর লোকসান হয়ে গেল।  বনদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫৩টি হাতির দলটিতে ৮টি শাবক রয়েছে। অন্যান্য সময় হাতির দল নির্দিষ্ট রুট দিয়ে সোনামুখীর দিকে চলে যায়। কিন্তু সোমবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের চমকাইতলা থেকে জয়পুরের আধকাটা রেঞ্জ এলাকায় ঢুকলেও দু’দিন ধরে একই এলাকায় ঘোরাফেরা করেছে। দলের একাধিক শাবক থাকায় তাদের গতিও শ্লথ। দিনের বেলায় জঙ্গলে আশ্রয় নিলেও সন্ধ্যা নামলেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)