• পর্যটকদের ‘ওয়েলকাম গিফ্ট’ দিচ্ছে না বনদপ্তর, সঙ্কটে ধূপঝোরার হস্তশিল্পীরা
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: আগে যেসব পর্যটক গোরুমারার বনবাংলোগুলিতে থাকতেন, তাঁদের ‘ওয়েলকাম গিফ্ট’ দিত বনদপ্তর। তাতে থাকত পাটের তৈরি ব্যাগ, কার্পেট কিংবা পাপোশ। যা পেয়ে যার পরনাই খুশি হতেন পর্যটকরা। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বনবাংলোগুলি চালু হলেও বনদপ্তরের তরফে পর্যটকদের আগেরমতো ‘ওয়েলকাম গিফ্ট’ দেওয়া হচ্ছে না। এতেই সঙ্কটে পড়েছেন ধূপঝোরার হস্তশিল্পীরা। তাঁরা পাটের ব্যাগ, কার্পেট, পাপোশের মতো অসাধারণ কারুকার্য করা নানা ধরনের সামগ্রী তৈরি করলেও, তা বিক্রি হচ্ছে না সেভাবে। স্বাভাবিকভাবেই রোজগার কমছে বনবস্তির বাসিন্দা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হস্তশিল্পীদের। 


    গোরুমারার বনবাংলোগুলি যখন বন্ধ ছিল, তখন চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করে কোনওমতে পেট চালিয়েছেন তাঁরা। দেরিতে হলেও বনবাংলো চালুর খবরে খুশি হয়েছিলেন ওই হস্তশিল্পীরা। ভেবেছিলেন, আবার আগের মতো তাঁদের হাতে তৈরি সামগ্রী কিনে পর্যটকদের ‘ওয়েলকাম গিফ্ট’ হিসেবে দেবে বনদপ্তর। এতে দু’টো পয়সা রোজগার হবে তাঁদের। কিন্তু তা হয়নি। এতেই ক্ষুব্ধ ধূপঝোরা এলিফ্যান্ট ক্যাম্প চত্বরের হস্তশিল্পীরা। তাঁদের বক্তব্য, এখানে ৪৫ জন হস্তশিল্পী পালা করে কাজ করেন। দম ফেলার ফুরসত থাকত না একসময়। কিন্তু এখন উৎপাদিত সামগ্রীর বিক্রি নেই বললেই চলে। ফলে সবাইকে কাজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বেশিরভাগ মেশিনই খালি পড়ে থাকছে।


    ধূপঝোরার বিট অফিসার জীবন বিশ্বকর্মার অবশ্য বক্তব্য, পর্যটকদের যখন ওয়েলকাম গিফ্ট দেওয়া হতো, তখন বিষয়টি প্যাকেজের মধ্যে ছিল। এখন শুধুমাত্র অফলাইনে বনবাংলোর বুকিং হচ্ছে। খাওয়াদাওয়া, হাতি সাফারি, আদিবাসী নৃত্য সবটাই আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। সেসব পর্যটকরা চাইলে নেবেন, না হলে নেবেন না। স্বাভাবিকভাবেই হস্তশিল্পীদের তৈরি সামগ্রী পর্যটকরা কিনবেন কি না, এখন তা পুরোপুরি তাঁদের বিষয়। এই নিয়মে যে হস্তশিল্পীদের তৈরি সামগ্রীর বিক্রি কমেছে, তা অবশ্য পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন বিট অফিসার।


    ধূপঝোরায় হস্তশিল্পীদের প্রশিক্ষক সুখদেব সাহা বলেন, আগে প্যাকেজের মধ্যে ‘ওয়েলকাম গিফ্ট’ দেওয়ার জন্য বনবাংলো পিছু ২৫০ টাকা নেওয়া হতো। ওই টাকায় পর্যটকদের দেওয়া হতো ব্যাগ, পাপোশ। এতে যেমন হস্তশিল্পীদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি হতো, তেমনই পর্যটকরাও ওই গিফ্ট পেয়ে দারুণ খুশি হতেন। এখন ধূপঝোরা বনবাংলো চালু হলেও তাতে পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। বাইরে থেকে যাঁরা ধূপঝোরায় হাতি সাফারি করতে আসছেন, তাঁদের ধরে বেঁধে কিছু সামগ্রী বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছেন হস্তশিল্পীরা। কিন্তু এভাবে কি সংসার চলে? ধূপঝোরার এক হস্তশিল্পীর কথায়, একশো টাকার সামগ্রী বিক্রি করলে আমাদের ৪৫ টাকা প্রাপ্য থাকে। ক্রেতাই নেই, কাদের কাছে বিক্রি করব?
  • Link to this news (বর্তমান)