• দাদা-নেতাকে ভরসা নয়, বাংলার বাড়ি তৈরির  উপকরণ নিজেকেই কেনার পরামর্শ দেবে রাজ্য
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘর থেকে বাংলার বাড়ির টাকা ছাড়া শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী পাঁচ-ছ’দিনের মধ্যেই প্রত্যেক যোগ্য উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকা ব্যবহারের নিয়মাবলি সকলকে মানতে হবে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে: বাড়ির ন্যূনতম আয়তন কত হবে? জানতে চাওয়া হবে, রাজ্যের অনুদানের সঙ্গে উপভোক্তা নিজে কত কিছু টাকা যোগ করতে পারবেন? এই উপলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে নিয়েই রাজ্য সরকার একটি কর্মশালার আয়োজন করবে। দায়িত্বটি নিতে হবে পঞ্চায়েতগুলিকেই। নিজ নিজ এলাকার উপভোক্তাদের নিয়েই বৈঠক করবেন তাঁরা। 


    উপভোক্তাদের সতর্ক করতে এই কর্মশালাতেই বিশেষ বার্তা দেওয়া হবে। তাদের পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হবে, যতটা সম্ভব নিজেরাই সরাসরি বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ি তৈরির উপকরণ ও সরঞ্জাম কিনবেন। বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তারা যেন কোনোভাবেই কোনও ‘দাদা’ বা সিন্ডিকেটের খপ্পরে না পড়েন। তাতে তাঁদের টাকা চোট যেতে পারে। ফলে কারও উপর নির্ভরশীল না-হয়ে তাঁরা যেন নিজেরাই বাড়ি তৈরির কাজ করিয়ে নেন। এই উপলক্ষ্যে একটি বিস্তারিত গাইডলাইন তৈরি হবে। তার জন্য আধিকারিকদের নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে সেটি ওই কর্মশালার জন্য দেওয়া হবে।  


    প্রসঙ্গত, অতীতে আবাস প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এমন একাধিক উদাহরণ সামনে এসেছিল, যেখানে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির হাতে বাড়ি তৈরির দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন উপভোক্তারা। অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা তা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে দিয়েছিলেন সিন্ডিকেট সদস্যদের হাতে। সিন্ডিকেট কিছু ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু অনেক জায়গাতেই বাড়ির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কেটে পড়েছিল তারা। সিন্ডিকেট উপভোক্তাদের কাছে দাবি করেছিল, যত টাকা তারা পেয়েছে তত টাকারই কাজ করে দিয়েছে। তাই বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করতে আরও টাকা দিতে হবে! যাঁরা দাবিমতো টাকা দিতে পেরেছেন, তাঁদেরই বাড়ি সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে অনেকেই ওই অতিরিক্ত টাকা বা অন্যায় দাবি মেটাতে পারেনি, চূড়ান্তভাবে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাঁদের। এই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার আগেভাগেই সতর্ক রাজ্য। আর সেই কারণেই একদিনব্যাপী কর্মশালায় ডেকে উপভোক্তাদের সচেতন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। 


    দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে জানালা পর্যন্ত নির্মাণ করে ফেলা বাধ্যতামূলক। জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা তার ছবি তুলে জিও ট্যাগ করে নির্দিষ্ট পোর্টালে দেওয়ার পরই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। রাজ্যের তৈরি এসওপি অনুসারে এই যাচাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হবে পঞ্চায়েত দপ্তরের নির্দিষ্ট অ্যাপ। ফলে কোনও অসাধু ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে বাড়ি তৈরির টাকা নষ্ট হলে, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট উপভোক্তা সমস্যায় পড়তে পারেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)