নির্দেশের পরও কেন তুলে ফেলা হল ট্রামলাইন? রিপোর্ট তলব করল হাইকোর্ট
বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে কিছু জিনিসের সংরক্ষণ প্রয়োজন।’ কলকাতার ঐতিহ্য ট্রাম তুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এমনটাই জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যর নির্দেশ, আগামী ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কলকাতায় কোনও জায়গা থেকে ট্রামলাইন তোলা যাবে না। ট্রাম নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা ওই দিন জানাবে আদালত।
এর আগে কলকাতার ট্রাম বাঁচাতে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল হাইকোর্টে। ওই মামলার প্রেক্ষিতে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সেই কমিটিকে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু অভিযোগ, গত জানুয়ারির পর আর কোনও বৈঠকই করেনি কমিটি। শুধু তাই নয়, কমিটিকে অন্ধকারে রেখে শহরের রাস্তা থেকে ট্রামলাইন তুলে দেওয়া হয়েছে এবং একাধিক রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়।
মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, ‘ট্রাম ফিরিয়ে আনতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন, তা রাজ্যের কাছে নেই।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অবশ্যই ওই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করার ক্ষমতা রাজ্যের রয়েছে। ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। বিদেশে তো ট্রাম ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ট্র্যাকের বদলে এখন রাবারের চাকাতেও ট্রাম চলছে। সেখানে কমিটিকে না জানিয়েই রাজ্য তা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে।’ অ্যডভোকেট জেনারেল বলেন, ‘ট্রাম পুরোপুরি তুলে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য ট্রামকে হেরিটেজ হিসেবে রাখতে চাইছে।’ প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, ‘তেমন হলে রাজ্য পিপিপি মডেলে ট্রাম ফিরিয়ে আনতে পারে। শুধুমাত্র কিছু আধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। সবার মত নিয়ে ট্রাম বাঁচাতে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির অজান্তেই ট্রাম লাইন তুলে দেওয়া হচ্ছে।’ অ্যাডভোকেট জেনারেল তখন বলেন, ‘ওই ট্রাম লাইনগুলি রাস্তার মাঝ বরাবর থাকার কারণে শহরে দুর্ঘটনা বাড়ছিল। বিশেষত বাইক-স্কুটার দুর্ঘটনার মুখে পড়ছিল। তাছাড়া, হাইকোর্ট ট্রামলাইন না তুলে ফেলার জন্য যে নির্দেশ জারি করেছিল, তা পুনর্বিবেচনার আগেই আবেদন জানিয়েছে রাজ্য।’ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি নির্দেশে জানিয়েছেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশের পরও কেন ট্রামলাইন তুলে ফেলা হল, তা নিয়ে কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। পাশাপাশি, যে চারটি রুটে এখন ট্রাম চলছে, তা বন্ধ করা যাবে না। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রামলাইন তোলা যাবে না। ওই দিন পরবর্তী শুনানি হবে।