নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একের পর এক কাগুজে কোম্পানি খুলে ব্যাঙ্ক ঋণ জালিয়াতি! হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৩০০ কোটি টাকা। সেই প্রতারণা কাণ্ডের তদন্তে এবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) নজরে রাজ্যের এক টিএমটি বার কোম্পানির মালিক। মঙ্গলবারই তাঁর বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় এজেন্সির টিম। তল্লাশি চলে কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতে ওই ইস্পাত ব্যবসায়ী ও তাঁর সহযোগীদের ঠিকানায়। ইডির অভিযোগ, ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কাজে না লাগিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমনকী স্পনসর হিসেবে ময়দানের অন্যতম একটি বড় ক্লাবেও ব্যাঙ্ক প্রতারণার টাকা ঢেলেছিলেন ওই ব্যবসায়ী। পুলিসের সঙ্গে তাঁর সখ্য সর্বজনবিদিত। ট্রাফিকের গার্ডরেলও স্পনসর করেছেন বিভিন্ন সময়ে। দিনভর তল্লাশিতে এসংক্রান্ত একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছে বলে খবর।
জানা গিয়েছে, কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় কারখানা স্থাপনের জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ২২টি কোম্পানি। তাদের অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে জমা পড়ে ঋণের টাকা। কাজের অগ্রগতি দেখিয়ে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটও জমা দেওয়া হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে ব্যাঙ্কের অফিসারদের! কোনও কারখানা সেখানে তৈরিই হয়নি। এরপর ২০২২ সালে ইডির দ্বারস্থ হয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, মোট ৩২৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তদন্তে নেমে ইডি জানতে পারে, ওই ২২টি কোম্পানিই ভুয়ো। পুরো টাকাটাই ঘুরপথে আত্মসাৎ করেছেন কলকাতার একটি আয়রন ও স্টিল মার্চেন্ট কোম্পানির মালিক।
ওই ২২টি কোম্পানির ডিরেক্টরদের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে অফিসারদের হাতে। দেখা যায়, ডিরেক্টরদের অধিকাংশই কোনও না কোনও বেসরকারি সংস্থার কর্মী। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির মালিকদের সঙ্গে আবার ওই ইস্পাত ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ওই কর্মচারীদের নথি নিয়ে খোলা হয়েছিল এই কাগুজে কোম্পানিগুলি। এছাড়া মূল অভিযুক্তের টিএমটি বার কোম্পানিকে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহ করা ব্যক্তিদের নামেও ভুয়ো সংস্থা খোলা হয়েছিল। সেগুলির সঙ্গে বিভিন্ন লেনদেন দেখিয়ে ব্যাঙ্কঋণের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতেই এদিন সকাল থেকে তল্লাশি অভিযানে নামে ইডির একাধিক টিম। তদন্তকারীরা পৌঁছে যান দক্ষিণ কলকাতার ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্স এলাকায় ইস্পাত ব্যবসায়ীর বাড়িতে। একইসঙ্গে দমদম ক্যান্টনমেন্ট, হাওড়ার গিরীশ ঘোষ রোড ও হুগলির বৈদ্যবাটিতে একাধিক ব্যক্তির ঠিকানাতেও তাঁরা হানা দেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মী। কাজের সূত্রে আসানসোল, দুর্গাপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত রয়েছে তাঁদের। প্রত্যেকের নামে একাধিক কোম্পানি খোলা হয়েছিল। এর বিনিময়ে প্রতি বছর ভালো টাকা কমিশনও পেতেন। তল্লাশিতে উদ্ধার হওয়া নথি যাচাই করা হচ্ছে বলে দাবি ইডির।