• ‘ভাগাড় নগরী’তে এবার জলযন্ত্রণার আশঙ্কা, সার্বিক কর্মবিরতির পথে আন্দোলনকারীরা
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: চুঁচুড়াবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়তে চলেছে। একে শহরজুড়ে জঞ্জালের স্তূপ, তার উপর বিষফোঁড়ার মতো মাথাচাড়া দিতে চলেছে পানীয় জল ও বিদ্যুতের সমস্যা। সবেরই মূলে চুঁচুড়া পুরসভা ও অস্থায়ী কর্মীদের চলমান সংঘাত। মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা বৈঠকে বসে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করেছেন। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে শহরবাসীর মাথার চুল খাড়া হওয়ার জোগাড়। ঠিক হয়েছে, আজ, বুধবার থেকে পুরসভার অফিসে স্থায়ী কর্মীদের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে যেটুকু কাজ হচ্ছিল, তাও বন্ধ হতে চলেছে। এর থেকেও বড়সড় সমস্যা দেখা দিতে চলেছে জল ও বিদ্যুৎ বিভাগে। মহকুমা শাসকের অনুরোধে এই দুই বিভাগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন অস্থায়ী কর্মীরা। তিনি আন্দোলনকারীদের কাছে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া ভাতা মেটানোর জন্য সময় চেয়েছিলেন। অস্থায়ী কর্মীদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবারের মধ্যে বকেয়া ভাতা না পেলে তাঁরা ২১ তারিখ অর্থাৎ শনিবার থেকে জল ও বিদ্যুৎ বিভাগে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করে দেবেন। ফলে আবর্জনা নিয়ে জর্জরিত বাসিন্দাদের বাড়িতে এবার পুরসভার জলও পৌঁছবে না। তাতে ভোগান্তি আরও বাড়বে। সেইসঙ্গে জুড়তে চলেছে পথবাতির সমস্যা। এরপর জল ও আলোর জোগান বন্ধ হলে এই শহর কি আদৌ বাসযোগ্য থাকবে নাগরিকদের? পুরসভা ও অস্থায়ী কর্মীদের সংঘাতের আবহে এই প্রশ্নই এখন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।


    জটিলতা বাড়লেও পুরসভা ও প্রশাসন এদিনও ছিল নির্বিকার। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যার সমাধানের কোনও পথ পুরসভার কাছে নেই। দু’মাসের বকেয়া ভাতা অনেক দূরের কথা, একমাসের টাকাও ভাঁড়ারে নেই। চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অমিত রায় বলেন, পুরকর আদায়ের মাধ্যমে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনকারীদের অসহযোগিতায় তা করা যায়নি। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কাছে প্রায় আট কোটি বকেয়া আছে। সেই টাকাও সরকারি দপ্তরগুলি দেয়নি। ফলে, বকেয়া মেটানোর যাবতীয় পথ বন্ধ। পুরসভার তৃণমূল কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনের নেতা অসীম অধিকারী বলেন, প্রায় ১৮ দিনের আন্দোলনকে পুরকর্তারা পাত্তা দেননি। কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনও প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ফলে, সার্বিক কর্মবিরতির পথই বাছতে হচ্ছে। কবে ফের কাজ শুরু হবে, তা নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর।


    ২০২৪ সালের শুরু থেকেই বকেয়া ভাতা নিয়ে পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে পুরকর্তাদের বিরোধ শুরু হয়েছিল। নভেম্বরে তা তুঙ্গে ওঠে। এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন অস্থায়ী কর্মীরা। তার জেরে ইতিমধ্যেই গোটা চুঁচুড়া শহর ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবায় কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় নাগরিকদের যন্ত্রণা আরও বাড়বে। সমস্যার সমাধানের কোনও পথ এখনও পুরসভা বা প্রশাসন বের করতে পারেনি। ফলে, সাফাইহীন শহরে জলযন্ত্রণা ক্রমেই নিশ্চিত হয়ে উঠছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)