• সোনা পাচারে ‘শরীর ভাড়া’র দর বেড়েছে ১০ গুণ, সীমান্তে বিএসএফের কড়া নজরদারির জের
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে ভারত থেকে যাবে গোরু। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে আসবে কোটি কোটি টাকার সোনার বিস্কুট। পাচারকারীদের মধ্যে এমনই ছিল অলিখিত চুক্তি। এই চোরাকারবার ঘিরে সীমান্তের দুই পারেই গজিয়ে উঠেছে ‘অন্ধকার সাম্রাজ্য’। বর্তমানে গোরু পাচার প্রায় বন্ধ। কিন্তু, সোনা পাচার বন্ধ হয়নি। উল্টে, আগের চেয়ে বেড়েছে সোনার বিস্কুট পাচার। পাচারে পুরোদমে যুক্ত হয়েছে ‘শরীর ভাড়া’ দেওয়ার কৌশল! যেখানে পাচারকারীরা মলদ্বারে সোনার বিস্কুট ভরে ভারতে যায়। আগে ৪-৫ হাজার টাকার বিনিময়েই ৮-১০টি বিস্কুট পাচার করা হতো। কিন্তু, সীমান্তে এখন কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ। তাই ‘শরীর ভাড়া’র দর বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ! গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০-৫০ হাজারের নীচে কেউ এই কাজ করছে না এখন। যদিও ‘হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর’ যন্ত্রের জন্য কোনও পাচারকারীই রেহাই পাচ্ছে না। পেটে ঠেকালেই বিপ বিপ শব্দে জ্বলে উঠছে লাল আলো!


    ‘শরীর ভাড়া’ দেওয়ার এই কৌশল বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। এখন এই পাচারাকরীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে মহিলারাও। যারা মলদ্বারে লুকিয়ে সোনা পাচার করে, তারা চোরাপথে সীমান্ত টপকায় না। পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে বৈধ উপায়েই ভারতে ঢোকে তারা। মলদ্বারে সোনার বিস্কুট ভরলে বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই। সিকিউরিটি চেকিংয়ে একটু অসতর্ক হলেই পাচারকারীরা সফল হয়ে যাবে। তাই বিএসএফ সীমান্তে কড়া নজরদারির পাশাপাশি যাত্রী পারাপারের প্রতিটি স্থলবন্দরে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেকিং করে। গত এক বছরে মলদ্বারে সোনা পাচারের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। তদন্তে গোয়েন্দারা দেখেছেন, এই ধরনের কাজ যারা করে, তারা ধরা পড়ার পর জামিন পেয়ে ফের ওই কাজেই যোগ দেয়। এই কারবারে অভিজ্ঞদের ‘ডিমান্ড’ বরাবর বেশি।


    গত ২৬ নভেম্বর পেট্রাপোল সীমান্তে এক সন্দেহজনক বাংলাদেশিকে আটক করেছিল বিএসএফ। কারণ, তার পেটে মেটাল ডিটেক্টর ঠেকাতেই বিপ বিপ শব্দে লাল আলো জ্বলে উঠেছিল। পরে জেরায় সে স্বীকার করে, মলদ্বারে সোনার বিস্কুট পাচার করছিল সে। তার শরীর থেকে চারটি সোনার বিস্কুট পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, চারটি বিস্কুটের জন্য সে ৪০ হাজার টাকা কমিশন নিয়েছিল। অথচ, আগে ৪টি সোনার বিস্কুটের জন্য দু’হাজারের বেশি জুটত না। তবে এবার কমিশন জোটার আগেই শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে তার। বিএসএফের কথায়, গরিব মানুষদেরকেই এই ধরনের টোপ দেওয়া হয়। কিন্তু সীমান্ত টপকে তারা ভারতে ঢুকতে পারবে না কিছুতেই। বিপ বিপ শব্দে জ্বলে উঠবে লাল আলো।
  • Link to this news (বর্তমান)