• বেহাল পরিকাঠামোর জন্য অভিভাবকদের অনীহা,   একজন পড়ুয়াকেই যত্ন নিয়ে পড়াচ্ছেন দুই শিক্ষক
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা খাতায়কলমে ছ’জন। তার মধ্যে পাঁচজনই স্কুলে আসে না। তাই মাত্র এক পড়ুয়াকে নিয়েই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়! অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত নাগরিক শিক্ষা সঙ্ঘ নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের এই অবস্থা। একটা সময় ছিল, যখন এলাকার ভালো প্রাথমিক স্কুল বলতে এই বিদ্যালয়কে চিনত মানুষ। এখন চিত্রটা আমূল বদলে গিয়েছে। শিশুদের হইচই আর শোনা যায় না। বিদ্যালয় চত্বরজুড়ে অখণ্ড নীরবতা। তবে মাত্র একজন পড়ুয়াকেই যত্ন নিয়ে পাঠ দিতে ভুলছেন না এখানকার দুই শিক্ষক। দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকার ফলে স্কুলের বাকি ঘরগুলি ধুলোর আস্তরণে ঢেকেছে। এখন অফিসঘরেই ওই ছাত্রের ক্লাস নেন এক সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকা। স্কুলটির এহেন দুর্দশা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের আক্ষেপের শেষ নেই। তাঁদের আর্জি, দ্রুত স্কুলটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক শিক্ষাদপ্তর। 


    ১৯৫২ সালে এলাকায় শিক্ষার প্রসারের স্বার্থে অশোকনগরে প্রতিষ্ঠা হয় নাগরিক শিক্ষা সঙ্ঘ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়। এখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে বহু ছাত্রছাত্রী আজ প্রতিষ্ঠিত। একটা সময় এই বিদ্যালয়ে শতাধিক পড়ুয়া থাকলেও বিগত কয়েক বছরে সংখ্যাটা ক্রমশ কমতে শুরু করে। সেই সুযোগে এলাকায় গজিয়ে ওঠে একাধিক বেসরকারি স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আগে এই বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন। ভালো পড়াশোনাও হতো। কিন্তু শিক্ষকদের সংখ্যা কমতে কমতে এখন মাত্র দু’জনে এসে ঠেকেছে। তাই অভিভাবকরা এখানে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে চাইছেন না। ভালো পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবও এর জন্য দায়ী বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। বিদ্যালয়ের চারপাশ ভরে রয়েছে আবর্জনা ও আগাছার জঙ্গলে। স্কুলের চারটি ঘরের তালা দীর্ঘদিন খোলা হয় না। তবে, একজন পড়ুয়া নিয়মিত মিড ডে মিল পাচ্ছে। বাকি পাঁচজন ছাত্রছাত্রীও মাঝেমধ্যে আসে। প্রধান শিক্ষিকা লিলি দাস ছাড়াও রয়েছেন সহকারী শিক্ষক প্রসেনজিৎ ঘোষ। তাঁরা নিয়মিত স্কুলে আসা পড়ুয়াকে যথেষ্ট যত্ন সহকারে পড়ান বলে জানালেন স্থানীয়রাই। প্রধান শিক্ষিকা লিলি দাস বলেন, ‘আমরা বারবার শিক্ষাদপ্তরকে স্কুলে শিক্ষক দেওয়ার জন্য বলেছি। কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। পড়ুয়া আনতে আমরা এলাকায় এলাকায় প্রচারও করেছি। অভিভাবকরা অনীহা প্রকাশ করছেন। আমরাও চাই, বিদ্যালয়ের আগের অবস্থা ফিরে আসুক।’ স্থানীয় বাসিন্দা গুপি মজুমদার বলেন, ‘এই স্কুল ছিল অশোকনগরের গর্ব। কিন্তু এখন কেন এই পরিস্থিতি, তা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও ভাবা উচিত।’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’
  • Link to this news (বর্তমান)