এই সময়, বর্ধমান: সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ‘স্বাদ বদল’ করতে বর্ধমানে হাজির হয়েছিল পাঞ্জাবের দাগি চোর। দিন সাতেক একাধিক দোকানে চুরি করার পাশাপাশি একটি মোটরবাইকও হাতিয়ে নিয়েছিল সে। আর সেই বাইকে চড়েই শক্তিগড় থানার নাকা চেকিংয়ে ধরা পড়ে যায় ধরমপ্রীত সিং নামে সেই চোর। জেরায় তার গত কয়েকদিনের কাজকর্ম, অভিজ্ঞতার কথা শুনে রীতিমতো অবাক পুলিশ আধিকারিকরা।
বছরের অর্ধেক সময়েই জেলেই কাটে ধরমপ্রীতের। দোকানের শাটার বা বন্ধ বাড়ির তালা ভেঙে চুরি করা তার কাছে জলভাত। লক ভেঙে, তার কেটে মোটরবাইক চুরি করা যেন বাঁ হাতের খেলা। এমন ‘কৃতী’ চোর ক’দিন আগে ছাড়া পায় পাঞ্জাবের মোগা উপ সংশোধনাগার থেকে। তার আবার পায়ের তলায় সর্ষে।
বেশি দিন এক জায়গায় থিতু হতে পারে না সে। পাঞ্জাবের মোগা জেলার নিহালসিংওয়ালা থানার হিম্মতপুরা এলাকার বাসিন্দা ধরমপীত সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা উঠে পড়ে অমৃতসর–হাওড়া ট্রেনে। গন্তব্য কলকাতা। পুলিশকে সে জানিয়েছে, ট্রেনে এক সময়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙে বর্ধমান স্টেশনে। তাই কলকাতা ভুলে বর্ধমানেই নেমে পড়ে সে।
বর্ধমান স্টেশনে নেমে পড়ার পড় কিছুটা ঘোরাঘুরি, সঙ্গে থাকা অল্প টাকায় রাস্তার হোটেলে খাওয়া–দাওয়া সারে। স্টেশন চত্বরে রাত কাটায়। এ ভাবে দিন দুয়েক চলার পড়ে পকেটে টান পড়ে তার। শেষমেষ গুডশেড রোড এলাকা সমেত স্টেশন লাগোয়া বেশ কিছু ছোট-বড় দোকানে রাতে চুরি করে চোরাই জিনিস বিক্রি করে। এ ভাবে কয়েকদিন কাটানোর পর বুঝতে পারে, এখানের থেকে পাঞ্জাবই ভালো। কিন্তু ফিরে যাওয়ার জন্য আরও কিছু টাকার প্রয়োজন।
তাই সে সোমবার রাতে বর্ধমান স্টেশন এলাকা থেকে একটি মোটরবাইক চুরি করে জিটি রোড ধরে সোজা ওঠে জাতীয় সড়কে। অজানা এলাকায় ঠিক এখানেই ভুল করে বসে ধরমপীত। সে সময়ে জাতীয় সড়কের বাই লেনে নাকা চেকিং করছিল শক্তিগড় থানার পুলিশ। সেই চেকিংয়ে ধরা পড়লে বাইকের কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেনি ধরমপীত। ড্রাইভিং লাইসেন্সও যে তার নেই।
শক্তিগড় থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ধরমপ্রীতকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। পাঞ্জাবি ভাষায় তার বক্তব্য বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে ওসি উত্তাল সামন্ত ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের কাছে। খবর যায় পুলিশ সুপারের দপ্তরে। ধৃত ব্যক্তি ও পুলিশের কথোপোকথনে দোভাষীর কাজ করেন পাঞ্জাবি জানা এক মহিলা পুলিশ অফিসার। এর পরই ধরমপ্রীতের ব্যাপারে সবটা জানা যায়। তার বাড়িতেও ফোন করে পুলিশ।
ধরমপ্রীতকে এ দিন বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তার তিন দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কোন এলাকায় চুরি করেছে, চুরির মাল কোথায় বিক্রি করেছে সে সব তথ্য জানতে আমরা হেফাজতে নিয়েছি। বাকিটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যে মোটরবাইকটি চুরি হয়েছিল তার মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে পুলিশ। সেটি আইন মেনে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’