মেয়ের বিয়ে। একে একে অতিথিরা হাজির। দেখা নেই শুধু ক্যাটারারের! এমন এক ‘ভুলুণ্ঠিত সম্মান’–এর সম্মুখীন বোধকরি কোনও বাবা–মাকেই হতে হয়নি। ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ শহরতলির গরফার বাসিন্দা বিধানচন্দ্র এবং হেনা বিশ্বাসের এমন অসম্মানের নেপথ্যে যে ক্যাটারার মালিক, মঙ্গলবার সেই রঙ্গন নিয়োগীকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার গড়িয়াহাট থানা।
রাতে ফোনে হেনা বলেন, ‘২৯ নভেম্বর মেয়ের বৌভাতেও তো ওই ক্যাটারারকে বুক করা হয়েছিল। বিয়েতে ওই সিন দেখে এক দিনের মধ্যে বেয়াই অন্য ক্যাটারার ম্যানেজ করেছেন।’
২৭ নভেম্বর বিয়ের দিন সকালে পাচক পাঠিয়েছিলেন রঙ্গন। কিন্তু, কাঁচামাল আসেনি। ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ ম্যানেজ করে নেন বিশ্বাস দম্পতি। বিকেলে রান্নার ঠাকুর ভাড়াবাড়ি থেকে জানান, ক্যাটারারের কেউ আসেনি। হেনার অভিযোগ, ‘রঙ্গনের ফোন বেজে যাচ্ছিল। অন্য মোবাইল থেকে ফোন করলে ধরে বলেছিলেন, আইসিইউ–তে আছি। গলা শুনে তো মনে হচ্ছিল মদ্যপ। তার আগে দুপুরে আমার ভাইকে ফোনে বলেছিল, ঠিক সময়ে খাবাার পৌঁছে যাবে। ডেকরেটার বাফে টেবিল রেডি করে বসে। স্ন্যাক্স তো দূরের কথা, মেন কোর্সের খাবার ‘এই পৌঁছে যাবে, এই পৌঁছে যাবে’ বলে আর আসেইনি।’ শেষে ফোন বন্ধ করে দেন রঙ্গন।
ততক্ষণে দূরদূরান্ত থেকে চলে এসেছেন বরের ঘরের মাসি, কনের ঘরের পিসি এবং আত্মীয়–স্বজনরা। সন্ধ্যায় হাজির বরযাত্রী ভর্তি বাসও। সব মিলিয়ে ‘কন্টিনেন্ট্যাল ক্যাটারিং সার্ভিস’–কে ৫৫০ জনের খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। পিনাকোলাডা–সহ একগুচ্ছ ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক এবং কড়াইশুটির কচুরি, ছোলার ডাল, আলুরদম, পনির, গ্রিন পিজ় পোলাও, চাটনি, মিষ্টি — কী ছিল না সেই ভেজ মেনুতে! রঙ্গনকে চুক্তির ৫ লক্ষ ৯১ হাজার টাকার পুরোটাই দিয়ে রেখেছিলেন বিধান। শেষে উপায় না–দেখে, স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল কিনে, পাচককে দিয়ে লুচি তরকারি তৈরি করে ম্যানেজ করা হয়। তাও প্রায় ২০০ জন খাবার না–পেয়ে রেগেমেগে বাড়ি ফিরে যান।
গড়িয়াহাট থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন কনের মা হেনা। জানান, ১৬ ডিসেম্বর রঙ্গনের বাড়িতে টাকা চাইতে গেলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, দুর্ব্যবহার করেন রঙ্গনের ছেলে রিভুও। পুলিশের দাবি, থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তদন্তে অসহযোগিতা করেন রঙ্গন। প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে, মঙ্গলবার রঙ্গনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হেনার আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওই ক্যাটারারের জন্য আমার মক্কেলের মান–সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়েছে। এ দিন রঙ্গনকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’
পুলিশ সূত্রে খবর, এর আগে ডানকুনি এবং কসবাতেও বিয়ের খাবারের অর্ডার নিয়ে একই ভাবে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন রঙ্গন। রঙ্গন ও তাঁর ছেলে রিভুর যে মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছিল, মঙ্গলবার রাতে তা বেজে যায়।